চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১০৬ প্রত্যাশা চসিকের

ইফতেখারুল ইসলাম

১০ অক্টোবর, ২০২০ | ১:২১ অপরাহ্ণ

নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ১০৬টি সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এরমধ্যে সেবা সংস্থাসমূহের কাছে ১০৪টি এবং মন্ত্রণালয়ের কাছে দুটি সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় চসিকের পাঁচটি চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরা হয়। নগর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট জনদাবির এসব প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণে উন্নয়ন এবং সেবার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমছে না। মূলত সেবা সংস্থাগুলোর অবহেলা ও সমন্বয়হীনতার কারণে নাগরিক সেবার প্রত্যাশাগুলো অধরাই থেকে যায়। চসিকের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ হল আর্থিক সক্ষমতার অভাব। নগরের সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ম্যাচিং ফান্ড এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকুরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত জটিলতা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট চসিকের উদ্যোগ ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ শীর্ষক সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয় সভায় চসিক ২৭টি সেবা সংস্থার কাছে ১০৮টি বিষয়ে সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। পরে আরও দুই দফা অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায়ও সংস্থাসমূহের কাছে দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু এসব দাবি উপেক্ষিতই থেকে যায় বলে অভিযোগ চসিকের। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই নগরীর সেবা সংস্থার কাছে ১০৬টি প্রত্যাশা উপস্থাপন করা হয়। প্রত্যাশাসমূহের মধ্যে রয়েছে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে গরু বাজার, আধুনিক কসাইখানা, বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল ও সমৃদ্ধ নগরীর স্বার্থে অন্যান্য আধুনিক স্থাপনা গড়ে তোলার জন্য চসিকের অনুকূলে ১০০ একর ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানে সহযোগিতা চাওয়া হয়। ‘বহদ্দারহাট মোড় থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত চাক্তাই খালের পাশে মেরিনার্স বাইপাস সড়ক নির্মাণ ও সন্নিহিত খালসমূহের পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় হুকুম দখলীয় ভূমির বিরোধপূর্ণ অংশের যথাশীঘ্র সমাধান চাওয়া হয়। চসিকের বিভিন্ন জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে প্রয়োজনীয় খাস জমি কমমূল্যে বা বিনামূল্যে বরাদ্দের ব্যবস্থা, আরেফিন নগর আবর্জনাগারের আশপাশের খাস জমি চসিকের নামে বন্দোবস্ত প্রদানে সহযোগিতা ও বাড়ৈপাড়া খালের অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের প্রত্যাশা করা হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছে প্রত্যাশা রাস্তা কর্তনের পরিকল্পনা গ্রহণের সাথে সাথে চসিককে অবহিত করা, অনুমতিপ্রাপ্ত কর্তনকৃত সড়কের কাজ স্বল্প সময়ে সমাপ্ত করে যৌথ পরিমাপ করা, পানি প্রবাহ সহজ করতে কালভার্ট, ব্রিজের নিচে স্থাপিত ওয়াসার পাইপগুলো সরিয়ে উঁচু করে বা পাশে স্থাপনের ব্যবস্থা করা, আনন্দবাজার আবর্জনাগারের পাশে ওয়াসার অব্যবহৃত জায়গায় আবর্জনা ফেলার অনুমতি প্রদান, ওয়াসার কাছে চসিকের হোল্ডিং ট্যাক্সের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা। এছাড়া সিএমপি’র কাছে ১২টি, সিডিএ’র মাস্টার প্ল্যান ও অন্যান্য প্ল্যান চূড়ান্ত করার পূর্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করা। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদির উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণকালে সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করা। সিডিএ কর্তৃক উন্নয়নের পর হস্তান্তরিত রাস্তা, ব্রিজ, বিদ্যুৎ লাইন ইত্যাদির ওয়ারেন্টি পিরিয়ড পর্যন্ত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। সিডিএ কর্তৃক উন্নয়ন কার্যক্রম চলাকালে সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, ব্রিজ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, লাইট, লাইন ইত্যাদির ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ সিডিএ’র কাছে ১২টি সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়। বন্দরের কাছে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে পুনঃমূল্যায়নকৃত হারে গৃহকর প্রদান। নগরের যে সকল সড়ক ও অবকাঠামো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে থাকেন সে সকল সড়ক ও অবকাঠামোর কিছু সংখ্যক সড়ক ও অবকাঠামো বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ করাসহ পাঁচটি সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের কাছে আটটি, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাছে একটি, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড চট্টগ্রামের কাছে তিনটি, গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কাছে তিনটি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কাছে তিনটি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে দুটি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আটটি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কাছে ছয়টি, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কাছে তিনটি, বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামের কাছে ছয়টি, র‌্যাব-০৭ চট্টগ্রামের কাছে দুটি, নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল’র কার্যালয় চট্টগ্রামের কাছে তিনটি, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কাছে চারটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের কাছে তিনটি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. চট্টগ্রামের কাছে দুটি এবং এলজিইডি চট্টগ্রাম, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স, বিআরটিএ চট্টগ্রাম, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে একটি করে দাবি প্রত্যাশা করা হয়।
চসিক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম হল দেশের জন্য সোনার ডিম পাড়া রাজ হাঁস। একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে সুন্দরভাবে। যেসব সংস্থা এই শহরকে ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে তারা যদি এই শহরের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে এবং যথাযথ পৌরকর প্রদান করে তাহলে এই সংস্থাকে সরকারের বরাদ্দের উপর নির্ভর করতে হবে না। নগর উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত সংস্থাসমূহের কাছে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। এসব সংস্থা এগিয়ে এলে সত্যিকার অর্থে নান্দনিক ও বাণিজ্যিক নগরে পরিণত হবে এই শহর। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম আজও (গতকাল শুক্রবার) বিষয়টি বলেছেন। তিনি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, পিলারের কারণে যেন রাস্তা নষ্ট না হয়। পিলার বসাতে হবে পরিকল্পিতভাবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট