চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চান্দগাঁওয়ে গণধর্ষণে অভিযুক্তদের দু’জন পুলিশের সোর্স

আল-আমিন সিকদার

১০ অক্টোবর, ২০২০ | ১:০০ অপরাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া থেকে চান্দগাঁওয়ের বাসায় আসার পথে গণধর্ষণের শিকার হন এক নারী। রিকশা থেকে নামিয়ে ৮ থেকে ১০ জন মিলে তাকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এমনই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। যাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। যার নাম মনোয়ারা বেগম (৫৫) হলেও এলাকায় তার পরিচিতি ‘লেবুর মা’ নামে। যার আরেকটি পরিচিতি রয়েছে পতিতাদের দালাল হিসেবেও। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর আলম (৩৮) ও পলাতক সুমন পুলিশের সোর্স হিসেবেও পরিচিত। যদিও রাত হলে সিএনজি অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তিরাও ওই এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে অপকর্ম করতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ঘটনাস্থল মৌলভীপুকুর পাড় এলাকার ত্রাস হিসেবেও পরিচিত গ্রেপ্তারকৃতরা। অভিযোগ রয়েছে, সড়কের উপর দাঁড়িয়ে পুলিশের সোর্স পরিচয় দেয়া জাহাঙ্গীর ও সুমনসহ বাকিরা মানুষের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিতো বলে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থান পরিদর্শনকালে স্থানীয় যুবক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জাহেদ পূর্বকোণকে এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সুমন, জাহাঙ্গীরসহ অন্যরা। তারা রাতের বেলা সিএনজি অটোরিকশা চালক হিসেবে কাজ করে। এসবের আড়ালে মূলত তারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করে।
এদিকে এ সংক্রান্তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, এক নারী রাঙ্গুনিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসছিলেন। কাপ্তাই রাস্তার মাথা সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে রিকশা নিয়ে তার বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে মৌলভীপুকুড় পাড় এলাকায় জাহাঙ্গীরসহ আসামিরা ওই নারীকে রিকশা থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেয়ার পর ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে পুলিশ। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে এক নারীও রয়েছেন যিনি ধর্ষণে সহায়তাকারী।
তবে পুলিশের এই তথ্য অস্বীকার করেছেন আসামিরা। সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত একাধিক আসামির সঙ্গে কথা বললে তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কেউ ওই নারীকে ধর্ষণ করিনি। আপনারা প্রয়োজনে আমাদের ডিএনএ টেস্ট করে দেখতে পারেন। চান্দগাঁও থানা পুলিশের সোর্স সুমন এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। অথচ পুলিশ সুমনকে সাথে নিয়ে আমাদের গ্রেপ্তার করলেও তাকে গ্রেপ্তার করেনি।’
গ্রেপ্তার দেবু বড়ুয়া বলেন, ‘পুলিশের সোর্স সুমনসহ আমরা একই স্ট্যান্ডে সিএনজি চালায়। ভিকটিম নারী পতিতাবৃত্তি করে। করোনার সময় গত দুই মাস আগে ওই নারী আমাদের এক বন্ধুর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় ওই নারীকে দেখে সুমন আমাদের ডাক দেয়। পরে আমরা তার সাথে আসি। মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় এসে আমরা ওই নারীকে গ্রেপ্তার করি। তার কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করি। এসময় ওই নারীর সঙ্গে একটি ছেলে ছিল। টাকার জন্য আমরা তাদেরকে মারধর করি। ছেলেটিকেই বেশি মারধর করা হয়। এরপর আমরা বাসায় চলে যাই। পরে সকালে সুমন এসে আমার বাসার দরজায় নক করে। কাল রাতের বিষয়ে কথা বলবে বলে সে বাসায় পুলিশ নিয়ে আসে। এরপর পুলিশ এসে আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।’
এদিকে ভিকটিমের সাথে যে ছেলেটি ছিল তার সম্পর্কে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পুলিশের উপ-কমিশনার জানান, ‘আমরা শুনেছি সেসময় একটি ছেলে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর সাথে ছিলেন। তবে সে কে বা কোথায় আছেন এমন তথ্য এখনও পাইনি’।
এদিকে ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত কি না তা জানতে তদন্ত চলছে বলেও জানান চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেশ বড়–য়া। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর পূর্ব পরিচয় রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত কী না তা তদন্তে জানা যাবে। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে পুলিশ সোর্স সুমনসহ জড়িত অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট