চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আর্থিক সংকটে সংগীত শিল্পীরা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৪ জুলাই, ২০২০ | ৩:২৮ অপরাহ্ণ

করোনাকালে মুখ থুবড়ে পড়েছে চট্টগ্রামের সঙ্গীতাঙ্গন। আয়-রোজগার নেই চট্টগ্রাম বেতার, টেলিভিশন, শিল্পকলা ও মঞ্চ শিল্পীদের। বৈশ্বিক এ মহামারীতে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। যার প্রভাব পড়েছে সকলের জীবনের উপর। তেমনি প্রভাব পড়েছে শিল্পীদের জীবনেও। তাই টানা চার মাসেরও বেশি সময় কোনো প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠান না থাকায় আর্থিক সংকটে দিন অতিবাহিত করছেন এ শিল্পীরা। এ শিল্পীদের মধ্যে অনেকের জীবিকার প্রধান উৎস এ সাংস্কৃতিক অঙ্গন। অনেক শিল্পী মঞ্চ শো করেই চালান সংসার। এছাড়া করোনার কারণে বিয়েসহ সব রকম সামাজিক অনুষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। এতে অনেক অভিনয়, যন্ত্র, আবৃত্তি ও কণ্ঠ শিল্পীকে আয়-রোজগারের জন্য ভিন্ন পথও বেছে নিতে হয়েছে। জানা যায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাদ্যযন্ত্র শিল্পীকে জীবিকার তাগিদে সবজি বিক্রি পর্যন্ত করতে হচ্ছে। শুধু তিনিই নন, ভালো নেই কোনো শিল্পী। এমনকি যারা বাসায় গিয়ে সংগীত শিক্ষা দিয়ে থাকেন তারাও। এদিকে, এখন আর ঢোল, তবলা, গিটার, হারমোনিয়াম, বাঁশি আর ঘুঙুরের শব্দে মুখরিত হয় না শিল্পকলার মঞ্চগুলো। করোনার কারণে জনসমাগমে মুখরিত সেই স্থানগুলো জুড়ে এখন শুধুই নীরবতা।

কথা হয় শহরের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে স্টেজ শো করা কিছু শিল্পীর সাথে। কেমন কাটছে চট্টগ্রামের এ শিল্পীদের জীবন! তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় কিছু কষ্টের কথা। এদের মধ্যে চৈতি, সাদিয়া, ব্যান্ড শিল্পী রুমন ও সাদাব বলেন, আমাদের প্রধান আয়ের উৎস শহরের ক্লাবে বিয়েসহ কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে স্টেজ শো করা। যা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। কিন্তু এখন কি হবে আমাদের! গান, বাজনা ছাড়া আমরা কখনো কিছুই করিনি। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ মাসেরও বেশি কোনো অনুষ্ঠানের বায়না নেই। আমাদের দলে আরো অনেকজন কাজ করেন। আমরা সকলে মহাসংকটময় দিন পার করছি। সরকার কোন উদ্যোগ না নিলে আমরা কি করে বাঁচবো?’ করোনাকালীন মহামারীতে এমন সংকট এখন পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। নিজেদের পেশার অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে পড়েছি আমরা। অনেকেই জীবিকার তাগিদে বেছে নিচ্ছেন ভিন্ন পেশা।

চট্টগ্রাম মঞ্চ শিল্পী সংস্থার সভাপতি, চট্টগ্রাম বেতার ও টেলিভিশন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠ শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের বলেন, করোনার এ মহা দুর্যোগে সবচেয়ে সংকটময় জীবন পার করছেন দেশের শিল্পী সমাজ। কারণ টানা পাঁচ মাসের বেশি দেশের সব রকম সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিয়ে বন্ধ রয়েছে। টেলিভিশন, রেডিও সেন্টারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিল্পকলার প্রোগ্রামগুলোও বন্ধ রয়েছে প্রথম থেকে। যেগুলো শিল্পীদের আয়-রোজগারের প্রধান উৎস। আমরা টেলিভিশন, রেডিও সেন্টারে শিল্পীরা একটা প্রোগ্রামের জন্য গ্রেড অনুযায়ী একটা সম্মানী পেতাম। এছাড়া অনেকে নানান রকম স্টেজ প্রোগ্রাম করেন। এতেই চলতো সংসার। এখন তো এ শিল্পীদের কোনো কাজ নেই। তাই খুব অভাবে দিন কাটাচ্ছেন শিল্পীরা। আমরা লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারছি না। সরকার এখন তো স্বল্প পরিসরে সবকিছুই খুলে দিয়েছে। তাই আমাদের শিল্পীদের জন্যও এবার সরকারের ভাবা উচিৎ। আমাদের বিশাল এ শিল্পী গোষ্ঠীর কথা ভেবে স্বল্প পরিসরে বিয়েসহ সকল সামাজিক অনুষ্ঠান করার সুযোগ করে দেয়া দরকার। এতে আমরাও খেয়ে পরে বাঁচার সুযোগ পাবো। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পীদের জন্য খুব অল্প টাকার একটি অনুদান এসেছে। যা দিয়ে কিছুই যে হয় না এটা সবাই জানে। আবার সবার কাছে সেই অনুদান পৌঁছায়ওনি। সব বিভাগ মিলে আমাদের চট্টগ্রামে প্রায় ৫শ’ এর বেশি শিল্পী আছেন। বর্তমানে এ শিল্পীদের জীবন খুবই অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। আমরা যারা বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী আছি তারা এর মধ্যে বেশ কয়েকবার চট্টগ্রাম টেলিভিশন সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার নিতাই কুমার ভট্টাচার্যকে এ শিল্পীদের কথা ভেবে অল্প পরিসরে হলেও কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বলেছি। তিনি আমাদের থেকে সময় নিয়ে অনেক দিন পরে জানান এখন সম্ভব নয়। কেউই আমাদের কথা ভাবছেন না। অথচ সরকার অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সব সেক্টরই খুলে দিয়েছে। তবে কি আমাদের কোনো দাম নেই। আমাদের কথাও সরকারের ভাবা উচিৎ।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট