চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই, তবু উদ্যমী

দায়িত্বের কাছে হারেনি পুলিশের মনোবল

নাজিম মুহাম্মদ

১৪ জুলাই, ২০২০ | ১:৩৭ অপরাহ্ণ

করোনার মহামারীতে তিনমাসের বেশি ধরে ছুটি কিংবা স্বজনদের কাছে যেতে পারছেন না পুলিশ সদস্যরা। বিশেষ করে নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যরা অনেকটা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। করোনার এ সময়ে মাসের পর মাস ব্যারাক কিংবা কমিউনিটি সেন্টারে থাকছেন তারা। নগরীতে বাসা থাকা সত্ত্বেও তিনমাসের বেশি সময় ধরে স্বজনদের কাছে যেতে পারেননি তারা। এতে অনেক পুলিশ সদস্য মানসিকভাবে হতাশায় ভুগছেন বৈকি।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় মোট আটজন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। তাদের মধ্যে গতকাল সোমবার ভোরে মারা গেছেন চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ অঞ্চলের উপ-কমিশনার মো. মিজানুর রহমান। করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এই কর্মকর্তার মৃত্যু সাধারণ পুলিশ সদস্যদের আতঙ্কিত করেছে। অনেকের ভেতরে নতুন করে হতাশা নেমে এসেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান গত ২৮ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাঁকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখানে আইসিইউতে রাখা হয়। গতকাল ভোরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।

চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মো.মাহাবুবর রহমান বলেন, উপ-পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানের অকালে চলে যাওয়ায় আমরা খুবই মর্মাহত। চলমান করোনা যুদ্ধে তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত যোদ্ধা। তাঁর মৃত্যু পুলিশ সদস্যদের কাছে চলমান করোনা যুদ্ধে প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

পুলিশ কমিশনার এই কর্মকর্তার মৃত্যুকে প্রেরণা হিসেবে নেয়ার কথা বললেও সাধারণ অনেক পুলিশ সদস্য হতাশা লুকাননি। একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, চলমান করোনা যুদ্ধে শুরু থেকে পুলিশ সম্মুখে থেকে কাজ করলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম পাননি। আক্রান্ত হওয়ার পর পাওয়া যায়নি পর্যাপ্ত চিকিৎসা। তারা বলেছেন, করোনার কারণে সব পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিনমাস টানা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে অনেকে মানসিকভাবে চাপে পড়েছিলেন। বিশেষ করে দিনের পর দিন ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা এই মানসিক চাপের কথা জানান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশকে সীমিত পরিসরে ছুটি দেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ পরিদর্শক বলেন, পুলিশ সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সাধারণ জনগণকে বাধ্য করলেও নিজেরা তা মানতে পারেনি। দায়িত্ব শেষে একটি গাড়িতে অনেক পুলিশ সদস্যকে গাদাগাদি করে বসতে হয়। ব্যারাকে অনেককে একসাথে খেতে ও থাকতে হয়েছে। ফলে একজন আক্রান্ত হলে দ্রুত অন্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাকালের শুরুতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি লকডাউন করতে গিয়েও আক্রান্ত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। বাসা বাড়ি লকডাউনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা কখনো কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারেননি। এসবের প্রয়োজনীয়তা পুলিশ সদস্যরা জানলেও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তা পালন করা যায়নি। এসব কিছু পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়।

জানা গেছে, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগরে পাঁচজন ও মহানগরের বাইরের এলাকায় পাঁচজন মারা গেছেন। জেলা পুলিশের মধ্যে ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মোখলেছুর রহমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আর সীতাকুণ্ড থানার এসআই একরামুল হক নিজ বাসায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়।

মিজানুর রহমান ছাড়া করোনায় মারা যাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অপর চারজন পুলিশ সদস্য মারা যান। তারা হলেন, ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মো. নঈমুল হক, হালিশহর থানার কনস্টেবল নেকবার, পিওএম (উত্তর) কনস্টেবল মামুন উদ্দিন ও ট্রাফিক কনস্টেবল আ ফ ম জাহেদ। এর বাইরে নৌ পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ ওমর ফারুক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ৪৪০ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাধিক।
পূর্বকোণ/‌এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট