চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছবি : শরীফ চৌধুরী
জঙ্গল ছলিমপুর ও লতিফপুরে মিরপুর আবাসিক এলাকা থেকে গতাকাল দুপরে তোলা ছবি।

লকডাউনে রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে প্লট!

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৮ জুন, ২০২০ | ৪:৫৩ অপরাহ্ণ

লকডাউন ও সরকারি অফিস বন্ধ থাকার সুযোগে দেদারসে পাহাড় কাটা চলছে নগরীর আকবরশাহ থানার জঙ্গল ছলিমপুর ও জঙ্গল লতিফপুরের মিরপুর আবাসিক এলাকায়। দুই মাস ধরে রাতের আঁধারে কৌশলে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করা হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী জানায়, দুই মাস ধরে চলছে পাহাড় কাটা। প্রতিদিন রাতে ১৫-২০ জন শ্রমিক দিয়ে কাটানো হচ্ছে পাহাড়। রাতে আঁধারেই ট্রাক ও ডাম্পার দিয়ে মাটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাহাড় কাটার মাটি ট্রাক ও ডাম্পারে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে।
জঙ্গল ছলিমপুর ও জঙ্গল লতিফপুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জঙ্গল লতিফপুর সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে। তার সঙ্গে রয়েছে তার ভাই, ভাগ্নে বিশ্ব কলোনির মহিউদ্দিন। কামাল উদ্দিনের একাধিক আত্মীয়স্বজনের বসতি রয়েছে জঙ্গল ছলিমপুর ও লতিফপুরে। পাহাড় কাটায় জড়িত রয়েছে জঙ্গল ছলিমপুরের আবদুল কাইয়ুম ও জঙ্গল লতিফপুরের মফিজুর রহমান। প্রত্যেকের নেতৃত্বে রয়েছে কিশোর বাহিনী। প্রশাসন থেকে শুরু করে কেউ পাহাড় কাটায় বাধা দিতে গেলে কিশোর বাহিনীর সদস্যরা বাধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় ত্রাস সৃষ্টি করে।
দেখা যায়, দক্ষিণ খুলশীর জাহেদ হোসেনের পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে কাটা হয়েছে। জাহেদের নামে একটি সাইনবোর্ডও টাঙানো রয়েছে। খরিদা সূত্রে জাহেদ পাহাড়ের মালিক হিসেবে এই সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে।
লকডাউন ও সরকারি সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর প্রশাসনিক কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ রয়েছে। পাহাড় কাটা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের অভিযান বন্ধ থাকার সুযোগে জঙ্গল ছলিমপুর ও জঙ্গল লতিফপুরে দেদারসে চলছে পাহাড় কাটা। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করছে। ঘর নির্মাণ ও জায়গা বিক্রি করে চলেছে। এতে পাহাড় পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পাহাড় কাটা বন্ধ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও করোনাভাইরাস সংকটের কারণে তা অনেকটা বন্ধ রয়েছে। সেই সুযোগে নির্বিঘেœ চলছে পাহাড় কাটা।
এলাকাবাসী জানায়, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার পর চলতি বর্ষার বৃষ্টি বিভিন্ন স্থানে ধস সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড় ধসে বড় দুর্ঘটনা না ঘটলেও অনেক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড় কাটা ও পাহাড় ধসের ছলিমপুরের ছড়াটি ভরাট হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টি পানি পড়লেই নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ওঠে যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের এক উপ-পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কার্যক্রম অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে। এই সুযোগ পাহাড় কাটা হতে পারে। তবে অভিযোগের পর পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বাসিন্দারা জানায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা পাহাড় কাটা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রভাবশালীরা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া ও জায়গা বিক্রিও করে আসছেন। দখল-কর্তৃত্ব বজায় রাখা ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রভাবশালীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে অনেকবার।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড়ধসে নগরীতে একদিনে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পাহাড়ধসের ২৮টি কারণ নির্ধারণ ও ৩৬ সুপারিশমালা প্রণয়ন করে। এতে পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোরভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে এখনো সেই সুপারিশমালা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট