চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পোশাক শিল্পের শ্রমিকের ব্যানারে টানা হচ্ছে সাধারণ যাত্রী

আল-আমিন সিকদার

২২ মে, ২০২০ | ৬:৩২ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসে লকডাউনে পড়া দেশের পোশাক শিল্প বাঁচাতে সীমিত পরিসরে কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিজিএমইএ। শ্রমিকদের চলাচলের সুবিধার্থে লকডাউনও অনেকটা শিথিল করে দেন সরকার। কারখানায় যাতায়াতে শ্রমিকদের জন্য চলাচলের অনুমতি পায় স্বল্প সংখ্যক গণপরিবহন। যার ফায়দা লুটছে গণপরিবহনগুলো। মূলত শ্রমিকদের আনা-নেওয়া করতে বাসগুলো সকাল সন্ধ্যা চলার কথা থাকলেও তা চলছে পুরো দিনব্যাপী। শুধু কি তাই, যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে গলাকাটা ভাড়া। বাসে উঠলেই যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ২০-৩০ টাকা।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপর আড়াইটায় নগরীর ইপিজেড মোড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় গণপরিবহনগুলোকে। যার প্রতিটির সামনেই ছোট্ট একটি ব্যানারে লেখা ‘জরুরি রপ্তানি কাজে নিয়োজিত, শ্রমিক পরিবহন’। অথচ প্রতিটি গাড়িতেই ডেকে ডেকে তুলতে দেখা যায় সাধারণ যাত্রীদের। হেলপারদের যাত্রী ডাকতে শোনা যায় উঠা-নামা ২০ টাকা বলে।
এ সময় গণপরিবহন চালকের এক সহকারীর কাছে ভাড়া বাড়তির কারণ জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘গাড়ি অল্প, রাস্তায় যাত্রীও কম। তাই ট্রিপও কম। বেশি ভাড়া না নিলে খরচ তোলা যাবে না, তাই ভাড়া বেশি’। তবে শ্রমিক পরিবহনের নাম করে কেন সাধারণ যাত্রী তুলছেন জানতে চাইলে কোন উত্তর দেননি তিনি। এমনকি কোন কারখানার শ্রমিক পরিবহনে এই বাসটি ব্যবহার করা হচ্ছে তাও বলতে পারেননি তিনি।

বাসে উঠা রাকিব নামে এক সাধারণ যাত্রী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমি একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। টিউশনি করিয়ে পড়ালেখার খরচ চালাই। গত দুই মাস কোন ছাত্র থেকে টিউশন ফি পাইনি। আজ এক ছাত্রের বাবা কল দিয়ে বাসায় ডেকে কিছু টাকা দিলেন। আমার বাসা হচ্ছে বন্দরটিলা। স্টুডেন্টের বাসা কাটগড়। বেতন নিয়ে বাসায় আসার পথে বাসে উঠতে গেলে হেলপার জানান, যেখানেই নামি ভাড়া ২০ টাকা ভাড়া। কিছু না ভেবে বাসে উঠে পরলাম। অবশ্য অন্য কোন উপায়ও নেই। কারণ, রিকশা নিলেও সর্বনিম্ন ৫০-৭০ টাকা লাগবে। অথচ এই দূরত্বে বাসের ভাড়া ৬-৭ টাকা মাত্র। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই দুর্যোগে যখন মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে তখন আমাদের দেশে যে যাকে পারছেন জবাই করে দিচ্ছেন। সত্যি আমরা বড়ই অসহায়’।
গণপরিবহনগুলোর এই নৈরাজ্য চোখে পড়েছে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদেরও। নিয়ম অমান্য করে যাত্রী তোলায় আটক করা হয়েছে ১৫টি বাস। বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রাফিকের বন্দর বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) মশিউর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘কারখানার যাত্রীদের আনা-নেয়ার কাজে স্বল্প সংখ্যক গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমতি প্রাপ্ত এসব গাড়ির সামনে সংশ্লিষ্ট কারখানার নামসহ ব্যানার লাগানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবুও এসব পরিবহনের চালকরা বাড়তি টাকার আশায় বাসে সাধারণ যাত্রী তুলছে। এমন প্রমাণ পাওয়ায় শুধুমাত্র বন্দর এলাকায় ১৫টিরও বেশি বাস আটক করা হয়। যদিও শ্রমিকদের যাতায়াতের কথা চিন্তা করে বাসগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে একই অপরাধ বার বার করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট