চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অপ্রতিরোধ্য ঈদযাত্রা : প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে শহর ছাড়ছে মানুষ

আল-আমিন সিকদার

২০ মে, ২০২০ | ৬:১২ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই আক্রান্তের রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি। যদিও সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে ব্যাংক, কারখানাসহ বিভিন্ন কার্যালয়। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আগামী দু-একদিনের মধ্যে ছুটি ঘোষণা করবে এগুলোও। এ ছুটিই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাইতো ছুটি ঘোষণার আগেই শহরে প্রবেশ ও বাহিরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। টানা ৭ দিন দেশের কোথাও চলবে না গণপরিবহন।
যাত্রার উদ্দেশ্যে ঘাটে নোঙর করবে না লঞ্চগুলো। দেশে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে শহর ছাড়ছে হাজারো মানুষ। যা চেকপোস্ট বসিয়েও সামলাতে পারছে না পুলিশ। কি করেই বা সামলাবে। শহর ছাড়তে ও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিতে নানান ছদ্মবেশ গ্রহণ করছেন যাত্রীরা।
প্রতিবছর ঈদে নাড়ির টানে বাড়ির পথে পাড়ি জমান শহুরে মানুষগুলো। তবে এবারের প্রেক্ষাপট পূর্বের চেয়ে ভিন্ন হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না এবারের ঈদযাত্রা। মরণঘাতী ভাইরাস করোনা ছোঁয়াছে হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব না মানলেই রয়েছে সংক্রমণের ঝুঁকি। যেহেতু ঝুঁকি এড়িয়ে ঈদ যাত্রা করা সম্ভব নয় তাই নিজ শহরে ঈদ করতে জনসাধারণের কাছে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কে শোনে কার কথা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর নগরীর ৫টি পয়েন্টে বসা পুলিশের চেকপোস্টকে ফাঁকি দিয়ে শহর ছাড়ছে বহু মানুষ। যার কিছু চিত্র ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যেখানে বিভিন্ন পেজে ভাইরাল হওয়া দৃশ্যে দেখা গেছে, নদী পার হতে ফেরিতে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে অসচেতন এসব মানুষ। আর এই জনস্রোতই জানান দেয় শহর ছাড়ার প্রমাণ। আর এ চিত্র প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় প্রশাসনের দায়িত্ব পালনের ওপর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাত্রীদের ছদ্মবেশের কাছে প্রশাসনের হার মানার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ, চেকপোস্ট পার হতে কখনো পরিবারের কাউকে অসুস্থ বলে এম্বুলেন্সযোগে আবার কখনো পরিবারের সদস্যের লাশ দাফনে কার কিংবা মাইক্রোযোগে চেকপোস্ট পার হয় যাত্রীরা। শুধু কি তাই, অনেকেতো বনে যান মালবাহী কাভার্ডভ্যান চালকের সহকারী কিংবা ফল বোঝাই কোন গাড়িতে বসে ফলের মালিক। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যানার লাগিয়ে অনেক চালক যাত্রী বোঝাই বাস পাড় করছেন চেকপোস্ট থেকে। অনেকে আবার নিয়েছে গণমাধ্যামের স্টিকারের সহায়তা। বিভিন্ন গাড়ির চালক ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায় যাত্রীদের এ ছদ্মবেশের কথা।
দুলাল নামে এক পিকআপ চালাক পূর্বকোণকে বলেন, এখন মধুমাস। পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর চারদিকে শুধু ফল আর ফল। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা পাহাড় থেকে বিভিন্ন ফল কিনে নিয়ে আসেন। আড়তদারদের সাথে বাগানের মালিকের লেনদেন বহুদিনের হলে অনেক সময় আড়তদাররা মাল আনতে যান না। সে সুযোগে দু’একজন যাত্রী আমার সহকারী বলে নিয়ে আসা যায়। এতে করে প্রশাসনও বুঝতে পারবে না, ওনারা কারা। কারণ, তাদের কাছে মালের চালান কপিটা রাখলেই সব ঝামেলার সমাধান। এভাবে আমিসহ অনেকেই যাত্রী ভাড়া মারছেন। কারণ, এখন গণপরিবহনগুলো বন্ধ থাকলেও চলছে মালবাহী গাড়িগুলো।
অকপটে এসব কথা স্বীকার করা এ চালক আরও জানান, কার-মাইক্রোগুলোর অবস্থাতো আরও ভায়াবহ। তারাও এখন দূরপাল্লার ভাড়া মারতে ব্যস্ত। ১০ টাকার ভাড়া এখন তাদের কাছে ৫০ টাকা। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তারাও ভাড়া মারছে।
শুধু কি সড়ক পথ?। রেলপথে যাত্রীবাহী রেল না চললেও মালবাহী রেলে উঠতে মরিয়া হয়ে পড়েছে অসচেতন এসব যাত্রীরা। এমনকি উঠতে না দেয়ায় ট্রেন পরিচালককে মারধরও করেছেন যাত্রীরা। সর্বশেষ সোমবার চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া পার্সেল ট্রেনে অবৈধ যাত্রী উঠতে বাধা দিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন ট্রেন পরিচালক মোহাম্মদ বখতিয়ার। এদিকে উচ্ছৃঙ্খল এবং অসেচতন এসব যাত্রীদের কারণে বাংলাদেশকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে যাত্রীদের ছদ্মবেশ ধারণের কথা স্বীকার করে ঈদযাত্রা ঠেকাতে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, এবার সবাইকে নিজ শহরে ঈদ করার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরাও জনসাধারণকে অনুরোধ করছি, আপনারা নিজ শহরেই ঈদ পালন করুন। ইতিমধ্যে শহরে প্রবেশ ও বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাঁচটি পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। যেখানে আইন অমান্যের কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় আড়াইশো যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা ও আটক করা হয়েছে। আমরা সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আরও কঠোর হব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট