চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পটিয়ায় কাকডাকা ভোরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ঈদের কেনাকাটা, ইউএনও’র হানা

পটিয়া সংবাদদাতা

১৯ মে, ২০২০ | ৬:২২ অপরাহ্ণ

মঙ্গলবার, ভোর সাড়ে ৫টা। শুরু হয় মানুষের কোলাহল। যেন সন্ধ্যার কোন এক সময়। বিপনী বিতানগুলোর দোকান পাট সব খোলা। ক্রেতা বিক্রেতাদের আনাগোনায় শুরু হয়েছে ঈদের বেচাকেনা। পটিয়া পৌরসদরের শহীদ ছবুর রোড ও স্টেশন রোড এলাকার বড় বড় বিপণী বিতানগুলোর দোকানদাররা কৌশল পাল্টিয়ে ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঈদের বেচাকেনা করে আসছে। গত কিছুদিন ধরে ওই স্থানগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি অমান্য করে জনসমাগম সৃষ্টি করায় স্থানীয় জনতার পাশাপাশি প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করে।

তার জন্য প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাকডাকা ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনার নতুন কৌশল নেয় মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিধিবাম। এই খবর পৌছে যায় পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমার নিকট। তিনি মঙ্গলবার ভোরে সেহরী খাওয়া শেষ করে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ক্রেতা সেজে অভিযানে নামে। এসময় হাতে নাতে ধরে দুই দোকানদারকে। তাদেরকে দুইজনকে দেয়া হয় অর্থদণ্ড। একজনকে পাঁচ হাজার টাকা ও অপরজনের নিকট থেকে সাত হাজার টাকার জরিমানা আদায় করা হয়। এদিকে ইউএনও আসার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। শহীদ ছবুর রোড়ের শাহ আমিন মার্কেটের মদিনা শাড়ীজ নামের একটি দোকানে ৬-৭ নারী ক্রেতাকে দোকানের ভেতর রেখে দোকানের বাইরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে দোকানদার। দোকানের ভেতর থেকে নারীর কন্ঠ শুনতে পেয়ে এগিয়ে যান ইউএনও ফারহানা জাহান উপমা। তালাবদ্ধ দোকানের বাইরে থেকে ক্রেতাগুলোর নিকট ইউএনও জানতে চান কেন তারা এখানে আসলেন। উত্তরে ক্রেতা নারীরা জানান, দোকান খোলা হবে বলে দোকানিরা তাদেরকে ডেকে।’

পরে ইউএনও ওই স্থান থেকে চলে যাওয়ার পর দোকানিরা এসে দোকানের তালা খুলে নারী ক্রেতাদের বের করে দেন।

ওই অভিযানে ইউএনও ফারহানা জাহান উপমার সঙ্গে ছিলেন পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন ও থানার সকল পুলিশ ফোর্স।

ওই সময়ে প্রায় ৫০টির অধিক কাপড়ের দোকান স্বাস্থ্য বিধি অমান্য করে মুনাফা লাভের লোভে ক্রেতাদেরকে ফোনে ফোনে ডেকে এনে বেচা বিক্রি করেন বলে জানান পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন।

‘জনসমাগমে করোনাভাইরাস সংক্রমের ঝুঁকি অত্যধিক। এজন্য আমরা বারবার তিন ফুট দূরত্ব রেখে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য বলছি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে বলছি। চট্টগ্রামে ট্রান্সমিশনের মাধ্যমেই বেশি সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে একসাথে হাজারো মানুষের ভিড়ে আক্রান্তের হার আরও বহুগুণ বাড়বে।’

এ প্রসঙ্গে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা বলেন, ‘উপজেলার অধিকাংশ মার্কেটের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে চলছে ঈদের কেনাকাটা। যেখানে একসাথে কেনাকাটা করছেন শত শত মানুষ। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন দোকানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার দায়ে জরিমানা করায় এখন দোকানিরা কৌশল পাল্টিয়ে ক্রেতাদের মোবাইলে ডেকে এনে ভোর ৫ টা থেকে বেচাকেনা করছেন। দুইটি দোকানদারকে জরিমানা করেছি। একজনকে ৭ হাজার টাকা ও অন্যজনকে ৫ হাজার টাকা। করোনার ঝুঁকি জেনেও অনেকে ছোট শিশুকেও কোলে নিয়ে আসছেন মার্কেটে। বেশ কয়েকটি মার্কেটে গিয়ে গাদাগাদি করে একসাথে কেনাকাটার অহরহ প্রমাণ পেয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট গেলেই সবাই ছুটোছুটি করে মার্কেট থেকে পালাতে থাকেন। মানুষ এখনো নিজেদের ভালোটুকুও বুঝতে পারছেন না।’

পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ঈদ শপিং কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাধারণ মানুষরা সচেতন না হলে পটিয়ায় করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’

এর আগে গত সোমবার দুপুরে পটিয়ার ছবুর রোড়ে স্বাস্থ্য বিধি না মেনে দোকান খোলা রাখায় দোকানের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং স্বাস্থ্য বিধি না মেনে বিনা প্রয়োজনে ঘুরে বেড়ানোর দায়ে ওই ক্রেতাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পটিয়ার ইউএনও ফারহানা জাহান উপমা।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ মে পর্যন্ত পটিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৫ জন। মারা গেছেন ৪ জন।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট