চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জব্বারের বলী খেলা স্থগিত

ডিসি হিল ও সিআরবি’র শিরিষ তলার বৈশাখী মেলাও হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

শত বছরের বেশি পুরনো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা এবার হচ্ছে না। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে এবারের মেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটি। গতকাল রবিবার কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বলী খেলা ও বৈশাখী মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী পূর্বকোণকে বলেন, ১১০ বছর নিয়মিত জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলার আয়োজনের পর এবারই প্রথম বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা স্থগিত করা হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবস্থায় বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব নববর্ষের অনুষ্ঠানও স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করে আমরাও চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক এ আয়োজন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলা সনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে লালদিঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বলী খেলা। বলী খেলার আগের দিন থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত তিন দিন ধরে লালদিঘির মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বসে বৈশাখী মেলা। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামিদামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন। দেশ বিভাগের পূর্বে একবার এক ইংরেজ গভর্নর সস্ত্রীক আবদুল জব্বারের বলীখেলা দেখতে এসেছিলেন বলে জানা যায়। আবার ১৯৬২ সালে দু’জন ফরাসি মল্লবীর আবদুল জব্বারের বলীখেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখন বিদেশ থেকে কোনো বলী না এলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিবছর জব্বারের এ বলীখেলায় অংশ নেয় অর্ধশত বলী। এদিকে, ডিসি হিল এবং সিআরবি শিরিষ তলায় আয়োজন হচ্ছে না পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান। এ বিষয়ে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আহমেদ ইকবাল হায়দার পূর্বকোণকে বলেন, গত ৩৩ বছর ধরে নিয়মিত ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়ে আসছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছরের আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। মাস খানেক আগে মেলা কমিটির বৈঠকে প্রতীকি মেলা আয়োজনের কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বৈশাখী মেলার সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। সব সাংস্কৃতিক কর্মীকে নিরাপদে থাকার কথা বলা হয়েছে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী গরিবদের সহায়তা করতেও বলা হয়েছে।
নববর্ষের আরেক বড় আয়োজন হয় নগরীর সিআরবি’র শিরিষ তলায়। ১০ বছর নিয়মিত মেলা ও সাহাবুদ্দিনের বলী খেলা আয়োজন করার পর প্রস্তুতি চলছিল এবারের ১১তম আসরের। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থতির কারণে সেই আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। সিআরবি’র শিরিষ তলার ‘বাংলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বাদল পূর্বকোণকে বলেন, এবারের সিআরবি’র শিরিষ তলায় ১১মত বৈশাখী মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এখন সবার সুস্থ থাকাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই জনসমাগম না করে সবার বাসায় থাকাই বেশি দরকার। উল্লেখ্য, ভিডিও কনফারেন্সে গত ৩১ মার্চ গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন জেলা প্রাশাসক ও প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এবারের নববর্ষে জনসমাগম করে কোনো অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরদিন তিন পার্বত্য জেলার বৈসাবিসহ বাংলা নববর্ষের সব ধরনের অনুষ্ঠান স্থগিতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট