চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কয়েক হাজার কোটি টাকার মৎস্যশিল্পে অশনি সংকেত

এনায়েত হোসেন মিঠু, মিরসরাই

২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ | ১২:২৪ অপরাহ্ণ

মিরসরাইয়ের ‘মৎস্যজোন’ খ্যাত মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গড়ে ওঠা কয়েক হাজার কোটি টাকার মৎস্যশিল্পে চলছে অশনি সংকেত। গত দু’দিন ধরে এখানকার মৎস্যঘের উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। গত মঙ্গলবার অভিযানের পর গতকাল বুধবারও সকাল থেকে অভিযান অব্যাহত রেখেছে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। নির্বিচারে এসব মৎস্যঘের ধ্বংস করায় আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে স্থানীয় মৎস্যচাষিদের বিভিন্ন সংগঠন।
বেজা কর্তৃপক্ষের এসব অভিযানকে অন্যায় আখ্যা দিয়ে মাছ চাষিরা বলছেন, বেজা কর্তৃপক্ষ নিজেদের অধিগ্রহণকৃত অঞ্চল চিহ্নিত না করে অযথা বৈধ মাছের ঘের ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। এটা তারা হতে দেবেন না। প্রয়োজনে বৃহত্তর এ মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন, প্রয়োজনে মাঠে আন্দোলন করবেন এবং আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
মাছ চাষি আজমল হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর যেসব প্রকল্প গড়ে উঠেছে তা অবৈধ। আমরা বৈধ  ঘেরে মাছ চাষ করছি। বেজা কর্তৃপক্ষ অবৈধ ঘেরগুলো উচ্ছেদ করার পর ৩০ বছরের পুরনো বৈধ ঘেরেও অভিযান চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমরা এর জন্য প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হবো। মাঠের আন্দোলনে যাবো। এতে কিছু না হলে আদালতের শরণাপন্ন হবো।
আরেক মাছ চাষি নুরুল আবছার বলেন, সরকার কৃষি ও মাছ চাষে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে। আমরা মাছ চাষিরা এখান থেকে বছরে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন মাছের যোগান দেই। ১৯৮৬-৮৭ সাল থেকে এখানে মাছ চাষ চলছে। আজকে এটি একটি মৎস্যজোনে রূপান্তর হয়েছে। দেশ এটা থেকে লাভবান হচ্ছে। আমরা বেজাকে অনুরোধ করবো তারা যেন অন্যায়ভাবে কোন মৎস্যঘের উচ্ছেদ না করে।
এদিকে, বেজার উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়াছিন বলেন, এখানে অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে কিছু অসাধু লোক মাছের ঘের তৈরি করেছে। আমরা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘের অপসারণ করছি। এতে স্থানীয় প্রশাসনও আমাদের সহযোগিতা করছে। সরকারের বন্দোবস্তকৃত ভূমি ও মাছের ঘের চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বেজার এ কর্মকর্তা বলেন, তা আমাদের জানা নেই। অন্যদিকে, গতকাল বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদের পর সরকার থেকে বন্দোবস্ত নেয়া জমিতে গড়ে ওঠা মাছের ঘের এলাকায়ও অভিযান চালাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বেজা এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এতে স্থানীয় মাছ চাষিদের মধ্যে পূঁজি হারানোর আতঙ্ক কাজ করছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মিরসরাই ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৮৬-১৯৮৭ সাল থেকে উপজেলার মুহুরী প্রকল্প এলাকার ইছাখালী ও বাঁশখালী মৌজায় সমুদ্রতীরে জেগে ওঠা চর বন্দোবস্ত দেয় সরকার। প্রথম ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভূমিহীনদের মাঝে ১২শ একর, পরে ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৩শ একর, চিংড়ি চাষিদের মাঝে ১৩শ ৮৫ একর এবং সর্বশেষ ২০০৪-২০০৫ সালে ভূমিহীনদের মাঝে ২৫শ একর ভূমি বন্দোবস্ত দেয় সরকার। পরবর্তীতে ৫ হাজার ৩শ ৮৫ একর পরিমাণের এসব ভূমিতে সমন্বিত মাছ চাষ শুরু করে বন্দোবস্ত গ্রহীতারা। যা বর্তমানে দেশের বৃহত্তম মিঠাপানির মৎস্য উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মুহুরী প্রকল্প এলাকার মিঠাপানির এসব মৎস্যঘেরে উৎপাদিত মাছ যায় সারাদেশে। এখানে বছরে উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ। যা চট্টগ্রাম জেলার মৎস্য খাদ্য চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করে। আর এসব মাছের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ১শ ২৭ কোটি টাকা। আনোয়ার এগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ও মিরসরাই মাছ চাষি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, মিরসরাই ও সোনাগাজির বৃহৎ অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর গড়ে উঠছে। চাষিদের দাবি শিল্পজোনের জন্য মৎস্যপ্রকল্প অধিগ্রহণ বা তা ধ্বংস না করে মাস্টারপ্ল্যান করে পরিকল্পিতভাবে মৎস্যজোন স্থাপন করা এবং এটিকে মৎস্যজোন হিসেবে যেন ঘোষণা করা হয়।
পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট