চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন হান্নান

নিজস্ব সংবাদদাতা

১ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মানিক চৌধুরী বাড়ির মৃত সৈয়দ আহমদের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফেজ কামাল উদ্দীন ১৯৬৬ সালে ৬ দফা, ৭০ এর নির্বাচন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সেদিনগুলোর স্মৃতিচারণে বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে বাঙালি জাতি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। পাকবাহিনী মুক্তিকামী জনতাকে হত্যার জন্য সোয়াত জাহাজ করে চট্টগ্রান বন্দরে নিয়ে আসে বিপুল গোলা-বারুদ। বীর জনতার প্রতিরোধের মুখে সাহস পাচ্ছিল না পাক বাহিনী সেই অস্ত্র নামানোর জন্য। জিয়া ২৫ মার্চ কিছু সৈনিক নিয়ে জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে গিয়ে আগ্রবাদের চৌমুহনীতে আক্রান্ত হন ছাত্রজনতা কর্তৃক। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় আগ্রাবাদ এলাকা। জনতা তাকে সি.ডি.এ গুদাম হয়ে বোয়ালখালীতে নিয়ে যায়। মধ্যরাতে হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিদের ওপর। ২৬ মার্চ সকাল বেলায় আমরা দেখা করতে গেলাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ.হান্নান এর সাথে। তিনি আমাকে বললেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আমাদের হাতে এসে গেছে, আমি তা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বিকাল ২ টার সময় ঘোষণা করব। আপনি একটা মাইক নিয়ে ফটিকছড়ি এবং রাউজান পর্যন্ত তা প্রচার করে দেন। আমি তাঁর আদেশ পেয়ে নাজিরহাট ও রাউজান পর্যন্ত তাহা প্রচার করি। দুপুর ২ টার পর চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা দেন হান্নান সাহেব। তার সেই ঘোষণা পত্র ধারাবাহিকভাবে বেতারে প্রচার করেন, তারা হলেন প্রফেসর আবুল কাশেম সন্দ্বীপী, সাহিত্যিক বেলাল মুহাম্মদ সন্দ্বীপী, আবদুল্লাহ আল ফারুক, কবি আবদুস ছালাম, সুলতানুল আনোয়ার ও গাজী হাবীব। ২৭ মার্চ সাহিত্যিক বেলাল মুহাম্মদ এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী সহকারে মেজর জিয়া তার গ্রুপ নিয়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে আসেন। সেখানে আসার পর তাকে দেখে ছাত্র-জনতা ক্ষেপে উঠে। অভিযোগ হল তিনি বাঙালি হত্যার জন্য সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে গেলেন। কবি আবদুস ছালাম জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, পাকবাহিনীর সাথে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করানোর জন্য তাকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বেতার পাঠ করানো হবে। তখন জনতা তাহা মেনে নেয়। তাই মেজর জিয়াকে দিয় বেতারে পাঠ করানো হল বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র। তাই তিনি হলেন স্বাধীনতার ৮ম ঘোষণা পাঠক।

 

অন্য দিকে এম.এ. ওহাব এমপি সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হবে যুদ্ধ পরিচালনার কেন্দ্র বিন্দু। উক্ত সংগ্রাম কমিটিতে যারা ছিলেন তারা হলেন এজহারুল হক, সৈয়দ মুহাম্মদ জামাল, মুন্সি মিয়া কোম্পানী, এস.এম, ফজলুল হক, নজির আহাম্মদ কোম্পানী, মো. ইউনুছ বিক্রম, শামছুল হক ড্রাইভার, মাস্টার আবুল হাশেম, মাস্টার শামছুল আনোয়ার, খয়রাতি মিয়া কোম্পানি, মাস্টার মোস্তাফা দেলোয়ার পাশা, শহীদ আলীমুল্লাহ, মুহাম্মদ নুরুল হক এবং আমি নিজেও ছিলাম। সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসা ও সীমান্ত থেকে ই,পি,আর, সৈনিকগণ সমবেত হতে থাকে অত্র এলাকায়। সুবেদার আজীজ ও সুবেদার গণির নেতৃত্বে পঞ্চাশ জন সৈনিক সম্ভবত হয়। ৩রা এপ্রিল তাদেরকে তিন ভাগে বিভক্ত করে, একদল বড়দিঘির পাড়ে, একদল ইটখোলা অপরদল সাধুর পাহাড়ে অবস্থান নেয়। যৌথ নেতৃত্বে ছিলেন এম, এ, ওহাব এমপি। ৩ ও ৪ তারিখ সেনানিবাসে হামলা চালানো হয়। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাপ্টেন মোসলেম উদ্দীন, ক্যাপ্টেন এনাম ও ক্যাপ্টেন এজাজের নেতৃত্বে ১৭০ জনের মত সেনাবাহিনীর সদস্য সমবেত হয়। ১০ এপ্রিল নন্দীর দিঘি থেকে হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ হয়। এতে হানাদার বাহিনীর ক্ষতি সাধিত হয়। ১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং সড়ক ও আলাওল দিঘি থেকে হানাদার বাহিনীর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। হানাদার বাহিনীর অর্টিলারি ও গোলন্দাজ বাহিনীর মুখে আমরা টিকে থাকতে পারিনি। আমরা ক্রমান্বয়ে ২০ এপ্রিল নাজিরহাটে গিয়ে পৌঁছাই। পরে আবদুল ওহাব এমপি, মীর্জা মনছুর এমপি, বিএ, বাদশা আলম, এস.এম. ফারুখ ও আনোয়ারুল আজিমসহ রামগড় চলে যাই ।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট