চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিকেএসপি’র বাছাই প্রক্রিয়া শুরু ৩ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১১:৪৭ অপরাহ্ণ

৯০ এর দশকে বাংলাদেশে পেশাদার ক্রীড়াবিদ হওয়ার কথা লোকে তেমন একটা আমলে নিত না। কিন্তু এখন ভালো খেলতে পারলে অর্থকড়ির সঙ্গে মেলে যশ-খ্যাতি পাওয়ায় সবাই উৎসাহিত করে!

আজকালকার অনেক অভিভাবকেরাও চান সন্তান খেলোয়াড় হোক। কিন্তু সেজন্য চাই খেলোয়াড় তৈরির উপযোগী উন্নত অবকাঠামো, সুন্দর পরিবেশ ও সঠিক গাইডলাইন যার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হলো বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)।

প্রতিষ্ঠানটি সব ধরনেরই খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। এ প্রতিষ্ঠান থেকেই উঠে এসে বিশ্ব ক্রিকেট মাতাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের মতো ক্রিকেটাররা। খ্যাতিমান এ প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও। ফুটবলে উঠে এসেছেন মাসুদ রানা, হাসান আল মামুন, ফিরোজ মাহমুদ, মামুনুল ইসলামের মতো তারকারা। এছাড়া একক খেলাগুলোতে তৈরি হয়েছেন শুটার আসিফ হোসেন, আবদুল্লাহ হেল বাকি, সাঁতারু মাহফুজার আক্তার শিলার মতো তারকারা। হকিতে আছেন মামুনুর রশিদ, রাসেল মাহমুদরা।

বিকেএসপি শুধু খেলোয়াড় তৈরির কারখানা হিসেবে পরিচিত পেলেও এর ব্যাপ্তি ও কার্যক্রম এখন অনেক বিশাল। প্রতিষ্ঠানটিতে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে বেড়ে ওঠা ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের যোগ্যতার ছাপ রাখছেন সামরিক বাহিনীগুলোতেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, আধুনিক কোচ, বৈমানিক, মনোবিদসহ অন্যান্য সম্মানজনক পেশাতেও বিচরণ করছে বিকেএসপির ক্যাডেটরা। একইসাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার পদে ক্যাডেট যোগ দেয়ার সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। আর এ সংখ্যা আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমান প্রশাসন নতুন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

যেসব খেলার সুযোগ আছে

প্রতিষ্ঠানটিতে ক্রিকেট, ফুটবল, অ্যাথলেটিকস, আর্চারি, সাঁতার, কারাতে, বক্সিং, জুডো, উশু, জিমন্যাস্টিকস, বাস্কেটবল, টেনিস, হকি, ভলিবল, তায়কোয়ান্দো, শুটিং ও টেবিল টেনিস—এই ১৭টি খেলায় আধুনিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষায় সময়

আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বাছাইপ্রক্রিয়া। এবারই প্রথমবারের মতো বাছাইপ্রক্রিয়ায় এসেছে নতুনত্ব। এতদিন ঢাকার মূল কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা দেয়ার নিয়ম ছিল। কিন্তু নতুন নিয়মানুযায়ী ভর্তিচ্ছুকদের সুবিধার কথা ভেবে এবারই প্রথম আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, বরিশাল, খুলনা ও সিলেটে প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া এবার একজন ভর্তিচ্ছুক পরীক্ষার্থী সুযোগ পাবে একাধিক খেলার ওপর পরীক্ষা দেয়ার। বাছাইপ্রক্রিয়ার বিস্তারিত জানা যাবে প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট: bksp.gov.bd-এ।

ভর্তির যত নিয়মকানুন

সাধারণত আসন খালি থাকা সাপেক্ষে চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অনূর্ধ্ব-১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে শিথিলতা রয়েছে কয়েকটি বিষয়ে। ক্রিকেট খেলায় পেস বোলারদের ক্ষেত্রে বয়স, এথলেটিকসে প্রতিভাবানদের ক্ষেত্রে নবম শ্রেণি ও আর্চারিতে মেয়েদের ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

বিকেএসপি’র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নির্দিষ্ট দিনে শুরু হয় প্রশিক্ষণার্থীদের ভর্তি বাছাই প্রক্রিয়া। সাধারণত প্রাথমিক বাছাইয়ে স্বাস্থ্য ও বয়স দেখা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে দেখা হয় শারীরিক সক্ষমতা। তৃতীয় পর্বে শিক্ষার্থীকে মাঠে পাঠানো হয়। সেখানে আবেদন অনুযায়ী নেয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণদের পরবর্তী সময় ৭ দিনের বাছাই ক্যাম্পে ডাকা হয়। সপ্তাহব্যাপী সকাল-বিকেল অনুশীলনের পর লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় খেলা ৭০, লিখিত পরীক্ষায় (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) ২০ ও ক্রীড়াবিজ্ঞানে ১০।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা (প্রথম ধাপ)

প্রথমেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসকেরা নির্ধারণ করে থাকেন আবেদনকারীর বয়স, উচ্চতা, ওজন ও শারীরিক কোনো ত্রুটি আছে কি না। আবেদনকারী স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ‘ইয়েস’ কার্ড পেলেই  নিজ নিজ খেলার মাঠে গিয়ে শারীরিক সক্ষমতা ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ যে ক্রিকেটে আবেদন করেছে, সে যাবে ক্রিকেট মাঠে। যে ফুটবলে, সে যাবে ফুটবল মাঠে।

শারীরিক সক্ষমতা (দ্বিতীয় ধাপ)

আবেদন অনুযায়ী নিজ নিজ মাঠেই হয়ে থাকে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা। সাধারণত দেখা হয় স্পিড (গতি), স্ট্রেংথ (শক্তি), এন্ডুরেন্স (দম), এজিলিটি (ক্ষিপ্রতা), ব্যালেন্স (ভারসাম্য), ফ্লেক্সিবিলিটি (নমনীয়তা)।

ব্যবহারিক পরীক্ষা (তৃতীয় ধাপ)

৭ দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফায় চূড়ান্ত লড়াইয়ে জায়গা করে নেয়ার জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবেদনকারীদের খেলা অনুযায়ী নেয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। যেমন ক্রিকেটে ভর্তিচ্ছুকদের জন্য ব্যাটিং-বোলিং ড্রিল ও ফুটবলারদের জন্য স্কিল-গেম।

প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য একদিনেই ৩টি ধাপ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এখান থেকে বাছাই করে নেয়া হয় ৭ দিনব্যাপী বাছাই পরীক্ষায়।

সাত দিনব্যাপী বাছাইপর্ব

সপ্তাহব্যাপী বাছাইপর্বের ধাপটি পুরোপুরি আবাসিকভাবে পরিচালনা করা হয়। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের বিকেএসপির নিজস্ব হোস্টেলে রেখে চূড়ান্ত নির্বাচনী পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। সপ্তাহব্যাপী সকাল-বিকেল অনুশীলনে তাদের মেধা ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে লক্ষ করা হয় আবেদনকারীর আচার-আচরণ। তবে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে তার জন্য ষষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসে পরীক্ষা হবে। আবার যে প্রতিযোগী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, তার জন্য পঞ্চম শ্রেণির সিলেবাস।

তাহলে আর দেরি কেন? যদি নিজের সন্তানদের দেখতে চান বিশ্বসেরা হতে তাও আবার টিভির পর্দায় তাহলে আজ থেকেই প্রস্তুতি নিন।

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট