চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বোয়ালিয়া ঝরনায় প্রাণের স্পন্দন

কামাল হোসেন হ মিরসরাই

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১৩ পূর্বাহ্ণ

আমার নিকট কেউ যদি জনতে চান পাহাড়, নদী এবং ঝরনার মধ্যে কোনটি বেশি আকর্ষণ করে তবে চোখ বন্ধ করে অবলীলায় অকপটে বলে দিব ঝরনা। প্রচ- গরমের তাবদাহে ৩/৪ ঘন্টায় যখন ১০/১৫ কিলোমিটার পাথুরে উচু নিচু পথে হেটে আপনি ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে যাবেন তখন নিমিষেই সব ক্লান্তি মুছে অনাবিল এক প্রশান্তির ছোয়াতে আপনাকে মুহূর্তেই সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তুলবে এই ঝরনা। আপনি ফিরে যাবেন শৈশবের চিন্তামুক্ত উচ্চল এক জীবনে। মাতোয়ারা হবেন ঝরনার ছন্দে। মনে হবে সদ্য জন্ম নেয়া শিশু পানিতে উদ্যোম গায়ে আপন মনে ঝাপটাচ্ছে। ঝরনায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় এখন, ঝরনার ভরা যৌবন, ঝিরিপথ জলে থই থই, পাহাড়গুলো সবুজে সমারোহ, সত্যিই ঝরনা পাগলদের জন্য লোভনীয় সময় বটে। গত মাসে একটি টিমের সাথে দামতুয়া গিয়ে ভগ্ন হৃদয়ে ফিরে আসতে হল। তাই ঝরনায় গিয়ে ঝপাৎ ঝপাৎ করে ছল ছল প্রবাহের নিচে চোখ বন্ধ করে বুদ হয়ে থাকার নেশা আদৌ অবদি রয়ে গেল। ২ দিন পর পবিত্র কোরবান, সকলে বাড়ি ফিরতে আর গরু ছাগল নিয়ে ব্যস্ত। আমি বরাবর ছন্নছাড়া, এসব দায়বদ্ধতা থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। একদিনের ডে ট্যুর এর জন্য উপযুক্ত সীতাকু–মিরসরাই। এখানে অধিকাংশ ঝরনায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কখনো যাইনি এমন একটি ঝরনা খুঁজছিলাম।
গতবছর এমন দিনে ১০ জনের টিম নিয়ে বোয়ালিয়া ঝরনা দেখে পথ হারিয়ে বাকি ঝরনাগুলো না দেখে ফিরে এসেছিলাম। এই এক অব্যক্ত ব্যাথা। ঝরনার কাছে গিয়ে না দেখে ফিরে আসা যেন সে ঝরনার প্রতি মোহ অনেকগুণ বৃদ্ধি করে দেয়। তাই আবার আটঘাট বেঁধে প্ল্যান করলাম ঝরনার বাজার এই বোয়লিয়া ট্রেইলে যাওয়ার। সারা রাত না ঘুমিয়ে স্টাডি করলাম, যেন ভুল না হয়। এবার শুধু বোয়ালিয়া দেখে ফিরতে রাজি নই, একসাথে দেখে আসতে চাই নোহাইত্যে কুম, আধার মানিক, বাউশ্যা ছড়া, উঠোনছড়া, কলা বাড়িয়া, ৩ নং ছড়াসহ সবকটি ঝরনা।

যথারীতি ১০ জনের টিম নিয়ে একটি মাইক্রোযোগে রওয়ানা হলাম সকাল ৮টায়। টিমে আছেন পটিয়া কলেজের প্রফেসর সাইফুদ্দীন, রিয়াজ, কালাম,সালাম, এডভোকেট তাজউদ্দীন, তালত সাইফ, চিত্রশিল্পী সোহেল রানা, স্বপ্নযাত্রীর আজিজ খান ও জুয়েল। মিরসরাই বাজার এ নাস্তা করে ও শুকনা খাবার নিয়ে চলে গেলাম ব্র্যাক পোল্ট্রি ফার্ম। সেখানে কাপড় পাল্টিয়ে সুমন নামের একজন গাইড নিয়ে রওয়ানা দিলাম সেই কাক্সিক্ষত ঝরনার পানে। সকালে বের হওয়ার সময় বৃষ্টি থাকায় আশা ছিল ভাল পানি পাব।

এবার শুরুতে প্রায় ২ ঘন্টা হেটে চলে গেলাম নোহাইত্যে খুম। যাওয়ার সময় উঠোন এর চমৎকার দৃশ্য ছবি তোলার লোভ সামলানো দায়। যাওয়ার পথে প্রায় ১ ঘন্টা প্রচুর কাঁদা ও ঝোঁকপথ চলতে বিপাকে ফেলছিল। তবু কেউ দমে যাওয়ার পাত্র নই। পরবর্তী ১ ঘন্টার পথ অনেকটা পাথুরে ও পরিপাটি বলা চলে। নোহাইত্যে খুম দুভাগে বিভক্ত হয়ে ঝাপটে পড়ছে পাথরের গায়, এখানে গোসল সেরে একটু পিছনে এসে বায়ে চলে গেলাম আধার মানিক, এটি অনেকটা উঁচু ঝরনা কিন্তু পানি তুলনামূলক কম। এর পর আরেকটু পিছনে এসে বায়ে বাউস্যা ঝরনা। এটিতে এসে অনেকটা হতাশ ছিলাম। কিন্তু এর ওপরে ওঠে চমকে গেলাম। বিশাল গুহা, পরিপাটি ঝিরি ও ক্যাসকেট। অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভুতুঢ়ে এক গুহা মনে হল। যত পথ যাই ততই যেন সৌন্দর্য বাড়তে থাকে সমান তালে। উপরে লতা, পাতার আবরণ, নিচে পানির প্রবাহ, দুপাশে বিশালকার দৈত্যকায় পাহাড় ও পাথর, পাখির কিচির মিচির সব মিলে সত্যি ভয়ঙ্কর সুন্দর এক ক্যাসকেট বলা চলে। এর পর ফিরতি পথ ধরে গেলাম বোয়ালিয়া। এটাতে যদিও আগেরবার গেছিলাম তবু এটার প্রতি একটু বাড়তি আকর্ষন কাজ করে। এই লাইনে এটি সব চেয়ে সুন্দর ও বড় ঝরনা, এখানে এসে গোসলের করতে না পারলে ট্যুর অপূর্ণ থেকে যাবে। আমার দেখা দুইটি ঝরনার ভিতরে প্রবেশ করে পিছন/ভিতর থেকে উপভোগ করা যায়, তার একটি ধুপ পানি অপরটি এই বোয়ালিয়া।

একদিনে এতগুলো ঝরনা, ঝিরিপথ, উঠোন, ক্যাসকেড দেখে ফিরে আসা সত্যিকার সুখকর স্মৃতি। বের হয়ে গোসল করে যখন মিরসরাই বাজার এসে দুপুরের খাবার খেলাম তখন বেলা ৫টা ৩০ মিনিট পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও পানীয় এর কারণে ক্লান্তি সহজে আমাদের কাবু করতে পারেনি, সাথে মেঘাচ্ছন্ন বৃষ্টিহীন আকাশ ভাল সহায়ক পরিবেশ ছিল। সব মিলে আজকে ৫ বার গোসলের করার সৌভাগ্য হল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট