চট্টগ্রাম বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

শোভাযাত্রায় ফুটুক শত ফুল
ফাইল ছবি

শোভাযাত্রায় ফুটুক শত ফুল

আহমেদ শরীফ শুভ

১৫ এপ্রিল, ২০২৫ | ৩:০১ অপরাহ্ণ

ষাট, সত্তুর কিংবা আশির দশকে আমাদের প্রজন্ম যখন বেড়ে উঠেছে তখন বর্ষবরণে ‘মঙ্গল’ কিংবা ‘আনন্দ’ কোন শোভাযাত্রারই প্রচলন ছিল না। আমাদের সংস্কৃতির এই আঙ্গিকটি ব্যাপক প্রসারতা লাভ করে নব্ববইয়ের দশকে। প্রথমে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ হিসেবে শুরু হলেও তা পরে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। বাঙালির সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসবে এই শোভাযাত্রা একটি নতুন মাত্রা যোগ করে, তা ব্যাপকভাবে জনসমাদৃত হয় এবং জনসম্পৃক্ততা পায়। এই একটি পার্বণে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে বাঙালি এক কাতারে শামিল হওয়ার সুযোগ পায় এবং এই চর্চাটি লালন করে। নানা ধরণের বৈচিত্র ও বিভেদের মধ্যেও এই শোভাযাত্রা আমাদের একটি ঐক্যের সেতুবন্ধ রচনা করে। এই শোভাযাত্রা যত বেশি আয়োজিত হবে, তার পরিসর যত বেশি বাড়বে আমাদের অন্তর্ভূক্তিচেতনা ও সহনশীলতা তত বেশি পরিশীলিত হবে।

 

এই শোভাযাত্রান নাম নিয়ে হালে নানামুখি বিতর্ক ও অভিমত দেখা যাচ্ছে। কেউ ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’তে বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন, আবার কেউ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য়। তাতে আসলে কোন ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। নানা নামে নানা ধরণের শোভাযাত্রা হতে পারে। যে যার স্বচ্ছন্দ্য অনুযায়ী পালন করবেন, যে যার পছন্দের শোভাযাত্রায় যোগ দেব্নে, তা ‘আনন্দ হোক, ‘মঙ্গল’ হোক আর ভিন্ন কোন নামেই হোক- এটাই বহুত্ববাদের পরিচায়ক। আমাদের এই ভুখণ্ডে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আস্তিক-নাস্তিক নানা পথ ও মতের মানুষের বাস। তাদের সবাইকে নিয়েই আমরা একটি বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মানে ব্রতী। নববর্ষ কিংবা অন্য কোন উৎসব সবাইকে একইভাবে একই নামে পালন করতে হবে এই ভাবনা বহুত্ববাদী দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক।

 

সুদূর অতীতে ‘মঙ্গল’ কিংবা ‘আনন্দ’ কোন শোভাযাত্রাই আয়োজিত হয়নি তাই বলে নিকট অতীত বা সা¤প্রতিক আয়োজিত শোভাযত্রাগুলো প্রথাবিরুদ্ধ হয়ে যায় না। বরং তা প্রথার হাল নাগাদ কিংবা আধুনিকায়নকে প্রতিনিধিত্ব করে, প্রথার পরিসর বর্ধন করে। সংস্কৃতি একটি গতিশীল (ডায়নামিক) বিষয়। মূল সুর ও ধারাকে অক্ষুণ্ন রেখে নতুন নতুন চর্চা যোগ হতেই পারে। সেই সাথে এই চর্চাটি নানা জন নানা নামে ও নানাভাবে পালন করতে পারেন। তাতে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে, বিস্তৃতি লাভ করে।

 

‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম দিয়ে বর্ষবরণের শোভাযাত্রা বের করলে আগে যারা শোভাযাত্রায় যোগ দেননি বা বিরোধিতা করেছেন তারা যদি এবারে যোগ দেন, উৎসবের সাথে একাত্ব বোধ করেন তবেই এই উৎসবটি আরো বেশি সর্বজনীন হবে, আরো রেশি অন্তর্ভূক্তিমূলক হবে। উদযাপনের এই দ্বিধাটি অপসারিত হলে এতো বছর যারা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম দিয়ে চর্চাটি করেছেন তাদের শোভাযাত্রার মাধ্যমে বর্ষবরণের এতোদিনের চর্চিত উদ্যোগই যথার্থতা পাবে।তাই বলে কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন যদি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে এতোদিনের চর্চাটি অব্যাহত রাখতে চান তাতেও কারও আপত্তি থাকা উচিত নয়। হোক না একাধিক শোভাযাত্রা। যে যার পছন্দমতো শোভাযাত্রায় যোগ দিক।

 

নাম নিয়ে বিতর্ক ছাপিয়ে পহেলা বৈশাখে দেশের নগর, বন্দর, গ্রাম, জনপদগুলো মুখরিত হোক নানা নামের ও নানা ধাঁচের শোভাযাত্রায়; আমাদের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান পরিচয়গুলোকে বাঙালিত্বের সমন্বিত পরিসরে উদযাপন করি। এই শোভাযাত্রায় ফুটুক শত ফুল। আনন্দে মঙ্গল হোক, মঙ্গল নিয়ে আসুক আনন্দের বার্তা।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট