চট্টগ্রাম শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সর্বশেষ:

‌‌ড. ইউনূস থাকছেন যতদিন, বাংলাদেশ ভারতের উঠান হবে না ততদিন

নাসির উদ্দিন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ২:৩৩ অপরাহ্ণ

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে ড.মুহাম্মদ ইউনূস হয় জেলে,না হয় দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হতেন। কারণ সবার জানা দাম্ভিক হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার চাইতে জনপ্রিয় কাউকে সহ্য করতে পারতেন না। তাই তার হাতে বলি হয়েছেন অনেক সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতাও। ড.ইউনূসকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করে শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলেন পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন ভারতে। প্রকৃতি শুধু তার বিচারই করেনি তার উপর প্রতিশোধও নিয়েছে। অথচ ড.ইউনূস আজ ১৭কোটি মানুষের নয়নমনি। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদমর্যাদায় থেকে নাগরিকদের সেবা করছেন। জীবনে ব্যার্থতার ইতিহাস নেই তাঁর। দেশ-বিদেশে যার ভাবমূর্তি মাউন্ট এভারেস্ট সম।

 

সারা বিশ্ব ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধা ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সমস্যা বুঝা এবং সমাধানের উপায় বের করার অসাধারণ বুদ্ধি তাঁর। তিনি বিশ্বে সেই ৭জন ব্যক্তির একজন যারা নোবেল শান্তি পুরস্কার,যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূস একজন সামাজিক উদ্যোক্তা, সমাজসেবক এবং নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী। তিনি ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।

 

প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৮৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক সমতা তৈরি ও দারিদ্য বিমোচনের নতুন এক অর্থনৈতিক ধারনাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন। যা তাঁকে বরণীয় করেছে বিশ্বজুড়ে। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রেরণার জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কার লাভ করেন। দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তিত্ব মুহাম্মদ ইউনূস’র সাংগঠনিক দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা সবার জানা। বিশ্বে তাঁর মতো এতো বেশি সাংগঠনিক ক্ষমতা আর কারো নেই। বিশ্বে তাঁর চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। তিনি সব কিছু পেয়ে গেছেন। তিনি এখন জাতিকে দিতে এসেছেন। তাড়াতাড়ি দ্রুত ক্ষতি কাটিয়ে তিনি অগ্রগতির দিকে দেশকে ধাবিত করছেন। দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য দিনরাত কাজ করছেন।

 

সবার প্রিয় হলেও শেখ হাসিনার অপ্রিয় মানুষ ড.ইউনূস। সবসময় স্বভাবজাত দম্ভ, অহমিকা ও ঔদ্ধত্য স্পষ্ট ছিলো তার আচরণে। আগেই বলেছি কারণ দাম্ভিক হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার চাইতে জনপ্রিয় কাউকে ভাবতে পারেন না। শাসন কাজেও অনুসরণ করেছেন পিতাকে। তাই তিনি ড.ইউনূসকে ঘায়েল করার চেষ্টা করতেন সব সময়।কখনো বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে, কখনো সুদখোর বলে কিংবা শেষ পযর্ন্ত একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে শায়েস্তা করতে তৎপর ছিলেন।মানসিক কষ্টের পাশাপাশি শারিরীক কষ্ট দেয়ার জন্য মামলায় হাজিরার দিন বন্ধ রাখা হতো আদালতের লিফট। যাতে ৮৪ বছর বয়সে তাকে হেঁটে কষ্ট করে আদালতের ৮ তলায় ওঠতে হয়।

 

শেখ হাসিনা দিল্লী পালিয়েও ড.ইউনূস ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধ করেননি। এখন পাশে পেয়েছেন তার কাছের বন্ধু মোদীকে। দুজন মিলে একেরপর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরীর চেষ্টা করছেন,ঠিক একইভাবে বিদেশেও তারা দেশবিরোধী ও ড.ইউনূস বিরোধী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। তাতে সত্যিকার অর্থে ভয় তৈরী হচ্ছে জনগণের মাঝে। কারণ যে সকল নেতা দেশকে সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, স্বনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন এবং দিল্লীকে এড়িয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করতে চাইছেন তাদের করুণ পরিণতি হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে খুনের শিকার হতে হয়েছে। তার পত্নী খালেদা জিয়া প্রাণে না মরলেও ভারতপন্থী সংবাদমাধ্যম মিথ্যা অপপপ্রচার করে তাঁর দল এবং পারিবারিকভাবে তাকে নাস্তা নাবুদ করে চরম হেনস্থা করেছেন। এতিমের টাকা চুরির মিথ্যা মামলা দিয়ে চরম অপমান করে জেলও খাটিয়েছেন। তিনি এখন মৃত্যুপথযাত্রী। কোন রকমে বেঁচে আছেন।

 

কিন্তু যারা দিল্লীর দাস ছিল,এরশাদ এবং হাসিনা দু’জনেই নির্বিঘ্নে সর্বোচ্চ সময় ক্ষমতায় থেকেছে। তারা দিল্লীর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবাধে শোষণ করতে দিয়েছে। দিল্লি এবং পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার একের পর এক ষড়যন্ত্র ড. ইউনূস মোকাবেলা করছেন সাহসিকতার সাথে।তারা বুঝতে পারছেন ড. ইউনূস মাউন্ট এভারেষ্ট সম ক্ষমতা নিয়ে আছেন। তাকে টলানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় দিল্লি এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার সর্বশেষ ভরসা ছিল ট্রাম্প। তারা ধারণা করছিলেন ট্রাম্প চেয়ারে বসলেই ইউনুস সরকারকে এক ধাক্কায় ফেলে দিবে।আবারো পদানত করা যাবে বাংলাদেশকে।

 

দিল্লি এবং ওয়াসিংটনের মধ্যে এখন হাওয়া উল্টো বইতে শুরু করেছে। ফলে ট্রাম্পের মৌন সমর্থনে বাংলাদেশ দখলের প্লান ভেস্তে গেলো দিল্লির। নতুন ট্রাম্প সরকারের প্রথম বৈদেশিক চুক্তি বাংলাদেশের সাথে হওয়ায় ওয়াসিংটনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রাধান্য পেয়েছে। ট্রাম্পের পারিবারিক ব্যবসায়ী পার্টনার বিশেষ বিমানে চড়ে ঘুরে গেল বাংলাদেশ। ফলে দিল্লি কুত্তা পাগল হবে সেটাই স্বাভাবিক। জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ যদি একটি দীর্ঘ মেয়াদি সাপ্লাই নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের উন্নতি কেউ ঠেকাতে পারবেনা। কিন্তু এটা কী দিল্লি সহ্য করবে, মনে হয় না।

 

হঠাৎ ওয়াসিংটনের এমন সাপোর্ট বাংলাদেশ পেয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমেরিকায় টপ ক্লাশ বন্ধুদের সাথে কানেকশনের কারণে। ড. ইউনূসের যদি শরীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকে এবং আগামী দুই তিন বছর ক্ষমতায় থাকেন তবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ বিশাল সুবিধা পেয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। কিন্তু দিল্লি কী সেটা হতে দিবে! তারা বিএনপিকে দিয়ে চাপ দিয়ে অতি দ্রুত নির্বাচন করিয়ে ড.ইউনূসকে সরাতে চাইবে,যাতে বাংলাদেশ যেন নতুন করে বিশ্বের সাথে কানেকশন তৈরি করতে না পারে। আর যদি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে সরাতে না পারে, সেক্ষেত্রে তারা ড. ইউনূসকে ভয় দেখানোর মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেবে।

 

ভারতের মূল পরিকল্পনা প্রফেসর ইউনূসকে সরানো। তাঁর ব্যাপক আন্তর্জাতিক গ্রহনযোগ্যতার কারণে বাংলাদেশে ভারত কিছুই করতে পারছে না। প্রফেসর ইউনূস ভারতের গলার কাটা। এই কাটা সরাতে চাইছে ভারত। এইজন্যই নির্বাচন দিয়ে সরে যাওয়ার চাপ তৈরি করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলা আওয়ামী লীগের সাথে আনন্দচিত্তে ভারতের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কামলা খাটছে। প্রফেসর ইউনূসের অকালবিদায় মানে ইন্ডিয়ার পুনরায় বাংলাদেশের তালুকদারি বহাল।

 

এতাদিন স্বৈরতান্ত্রিক ধারায় চলে আসছিল দেশ। তার বদলে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এরপরও বিশ্বাস করতে চাই, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অর্ন্তবর্তি সরকার তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অবিচল পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির কাঁধেই এখন দেশের দায়িত্ব। তাঁর চোখে এবার বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন সবাই। দেশের নানা খাতে ভর করা অশুভ শক্তিকে বিদায় করে অর্থনৈতিক সংস্কারসহ দেশ গঠনে সফল সফল হবেন তিনি । তাঁর জীবনে ব্যার্থতার ‍ইতিহাস নেই। ঐতিহাসিক ভাবে বাংলা কোনদিন দিল্লীর অধীনতা মেনে নেয়নি। বাংলাদেশ কখনো ভারতের উঠান হবে না।

লেখক : ব্যুরোচিফ, বাংলাভিশন চট্টগ্রাম

 

পূর্বকোণ/ইব/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট