চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিয়াম সাধনা সকল ধর্মে ঐতিহাসিকভাবে ফরজ

রায়হান আজাদ

৮ মে, ২০১৯ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

আল্লাহ রব্বুল আলামীনের আদেশ, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদর প্রতি সিয়াম ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয় তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যেন তোমরা তাকওয়া তথা খোদভীতির পথ অনুসরণ করতে পারো’- সুরা বাকারা আয়াত : ১৮৩। আল কুরআনের এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, সিয়াম মুসলমানদের উপর ঐতিহ্যগতভাবে ফরজ। তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআনে আছে, আল কুরআনের উদ্ধৃতি- ওয়াল্লাযিনা মিন ক্বাবলিকুম- ‘যারা তোমাদের পূর্বে ছিল’ কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক। এর দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল উম্মত এবং শরীয়তকেই বুঝায়। এতে বুঝা যায়, নামাজের ইবাদত থেকে যেমনিভাবে কোন উম্মত বা শরীয়তই খালি ছিল না, তেমনি রোজাও সবার জন্য ফরজ ছিল। আয়াতের মধ্যে শুধু বলা হয়েছে যে, – রোজা যেমন মুসলমানদের উপর ফরজ করা হয়েছে তেমনি পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। এ কথা দ্বারা এ তথ্য বুঝায় না যে, আগেকার উম্মতগণের রোজা সমগ্র শর্ত ও প্রকৃতির দিক দিয়ে মুসলমানদের উপর ফরজকৃত রোজারই অনুরূপ ছিল। যেমন, রোজার সময়সীমা, সংখ্যা এবং কখন তা রাখা হবে, এসব ব্যাপারে আগেকার উম্মতদের রোজার সাথে মুসলমানদের রোজার পার্থক্য হতে পারে, বাস্তব ক্ষেত্রে হয়েছেও তাই।
এ সম্পর্কে ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার লিখক খুব সুন্দর তথ্য দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘রোজা কালচার ভেদে অনেকটা পৃথক কিন্তু এমন কোন ধর্মের নাম পাওয়া যায় না যে ধর্মে তাদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মোটামুটিভাবে রোজাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। হিন্দু শাস্ত্রে উপবাস ব্রত পালনের নির্দেশ রয়েছে। তাই তারা প্রতি মাসের একাদশী ও দ্বাদশী তিথিতে উপবাসব্রত পালন করে থাকে। কোন কোন ব্রাহ্মণ কার্তিক মাসের প্রতি রবিবারও উপবাস পালন করে। অগ্নিপূজক পারসিকদের ধর্ম যাজকগণ রোজা রাখে। তাদের রোজা মানে বিকৃত রোজা। কেবল উপবাস থাকা ছাড়া আর কিছুই নয়। এদের রোজায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ফুটে উঠে না। হযরত আদম আলাইহিস সালামের উপর প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের তিনটি রোজা ফরজ ছিল। হযরত মুসা আলাইহিস সালামের উম্মতের উপর আশুরা এবং সপ্তাহের রোজা ছাড়াও আরো ক’দিন রোজা ফরজ ছিল। হযরত মু’আজ বিন জবল রদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ‘হযরত নূহ আলাইহিস সালাম থেকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব যুগ পর্যন্ত আশুরা এবং প্রতি মাসে তিনটি রোজা নির্ধারিত ছিল। রমজান মাসে রোজা রাখার হকুম আসলে এ বিধান মানছুখ (রহিত) হয়ে যায়’। হযরত হাসান বছরী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি হতে বর্ণিত আছে যে, ‘পূর্বেকার সকল উম্মতের উপর নামাজের ন্যায় রোজা ফরজ ছিল। নাসারাদের উপর একমাস রোজা ফরজ ছিল। তারা নিজেদের মনগড়া মতবাদে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করে’। হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহ আলাইহি তাফসীরে রুহুল মা’আনী থেকে নি¤œ লিখিত হাদীসটি নকল করেন ‘নাসারাদের উপর রমজান মাসের রোজা ফরজ ছিল। একদা তাদের কোন নৃপতি পীড়িত হওয়ায় তারা মানত করল যে, নৃপতির রোগমুক্তি হলে আমরা আরো দশটি রোজা বৃদ্ধি করে নেব। সুতরাং মাহে রমজানের ঐতিহ্য, মর্যাদা ও মহিমা রক্ষার্থে আমাদের সবাইকে দৃঢ় বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সাথে রোজা পালন করতে হবে এবং বেরোজাদারদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে। নগরীর ফুটপাত ও অলি-গলির মুখে যত্রতত্র পর্দা টানিয়ে যেভাবে দেদারছে খানাপিনার আয়োজন চলে তা একটি মুসলিম দেশের জন্য দৃষ্টিকটু বটে। এতে রমজানের পবিত্রতা বিনষ্ট হয়ে পড়ে। সরকার এসব ওপেন সিক্রেট সাময়িক খাবারের দোকান বন্ধ করে দেবে- ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সেটাই প্রত্যাশা করে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট