চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভেজাল যখন তেলে

অনলাইন ডেস্ক

২২ জানুয়ারি, ২০২৪ | ৮:৪৮ অপরাহ্ণ

খাদ্যে ভেজাল আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। প্রতিদিন আমরা যা খাচ্ছি তা আসলে কেমন খাবার? এসব খাবার কতোটা আমাদের শরীরের জন্য উপযুক্ত? এ বিষয়ে খুব কম গবেষণা হচ্ছে আমাদের দেশে।

 

যে গুটিকয়েক গবেষণা হয়েছে দেশে তার ফলাফল জানলে আপনার চোখ হবে ছানাবড়া! এরকম একটা গবেষণায় দেখা গেছে বাজারে বিক্রিত ৬৭% সয়াবিন তেলে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) রয়েছে মানবশরীরের সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। সয়াবিন তেলের উপর এরকম স্টাডিটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব নিউট্রিশান অ্যান্ড ফুড সাইন্স এবং ব্রাক ইউনিভার্সিটির জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ। খাবারে ট্রান্স ফ্যাটি এসিডকে সহনীয় মাত্রায় রাখার জন্য বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি ২০২১ খ্রিস্টাব্দে একটি নীতিমালা তৈরি করে, যাতে বলা আছে খাবারে ট্রান্স ফ্যাটি এসিডের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা হবে ২%। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ডিভিশন থেকে সংগৃহীত ১৫২১টি তেলের নমুনা নিয়ে স্টাডিতে দেখা গেছে এসব তেলে ট্রান্স ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে দুই থেকে চার গুন বেশি।

 

অর্থাৎ আমরা যারা প্রতিদিন সয়াবিন তেল খাচ্ছি রান্না করা খাবারের সাথে তাদের শরীর কতোটা ক্ষতির সম্মুখীন। এটা শুধু তেলের কথা বললাম, আমরা কত কী খাচ্ছি সারাদিন। অনেক সময় আমরা জানিও না কী বিষাক্ত খাবার আমরা প্রতিদিন জঠরাগ্নিতে ঢালছি। এর আগেও এক স্টাডিতে দেখা গেছে পাস্তুরিত তরল দুধ ও হলুদের গুড়ায় রয়েছে মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকারক হ্যাভি মেটাল। যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিতে ব্যপক ভূমিকা রাখছে। এবার বলি ট্রান্স ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাটি এসিড শরীরের কী কী ক্ষতি করে। ক্ষতির তালিকাটা লম্বা- হৃদরোগ, আলজেইমার, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্থুলতা, লিভার রোগ, বন্ধ্যাত্ব, ডিপ্রেশন ডিসর্ডার, স্মৃতিশক্তি হ্রাসসহ আরো অনেক রোগের কারণ এই ট্রান্স ফ্যাট।

 

এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বাংলাদেশে বছরে হৃদরোগে মারা যান ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। ট্রান্স ফ্যাটের পাশাপাশি হৃদরোগের অন্যান্য কারণগুলো হলো বায়ু দূষণ, কায়িক পরিশ্রম কম করা, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না-নেয়া এবং অত্যধিক মানসিক চাপে থাকা।

 

বায়ু দূষণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পাবলিক হ্যালথ ইস্যু। ২৫% হৃদরোগ হয় বায়ুদূষণ হতে। আলজেইমার মূলত বার্ধক্যজনিত ও সুস্পষ্ট কারণবিহীন স্নায়ুবিক অবক্ষয়মূলক রোগ। বিজ্ঞানিরা ধারনা করছেন এ রোগের একটা কারণ হতে পারে ট্রান্স ফ্যাট। সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের বেশি বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। তবে এ রোগের সূত্রপাত অনেক আগে থেকে হতে পারে। এ রোগের লক্ষণ হলো স্মৃতিহানি, চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস, স্থান-কাল-পাত্রে বিভ্রম, ব্যক্তিত্ব ও মেজাজে পরিবর্তন ইত্যাদি।

 

বাংলাদেশে প্রতিদিন ক্যান্সারে মারা যায় প্রায় ২৭৩ জন। তাতে বুঝা যায় ক্যান্সারের ভয়াবহতা। বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত, প্রতিদিন এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে আরও প্রায় ২লাখ মানুষ। খাবারে ভেজাল, পরিবেশ দূষণসহ বিভিন্নকারণে ক্যন্সার হয়। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের অনুমানে বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ট্রান্স ফ্যাট মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী। ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অষ্টম। এছাড়াও সয়াবিন তেলে ট্রান্স ফ্যাটের সহনীয় মাত্রার বেশি হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করছে যা একটি সুস্থ ও মেধাবী জাতি গঠনে অন্তরায়।

 

দেশে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। ডাইনামিক একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পেয়েছি আমরা। একটা সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য একটা সুসংগঠিত পাবলিক হেলথ সিস্টেম গড়ে তোলা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর দিবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। ট্রান্স ফ্যাট একটা জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই খাবারে ভেজাল রোধে সমস্ত খাদ্যপণ্যের পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নীরিক্ষায় সরকারকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম জাতি গঠনে যা অনিবার্য।

 

লেখক: শেখর দেব, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (আরটিসি), জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট)

 

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট