চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) তাৎপর্য ও শিক্ষা

অনলাইন ডেস্ক

১০ অক্টোবর, ২০২২ | ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ

সকল দিবসের শ্রেষ্ঠ দিবস ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। প্রত্যেক মাস কোনো না কোনো দিবসের জন্য মহিমান্বিত হয়ে থাকে। যেমন, শাবান মাস শবেবরাতের জন্য, রমযান মাস পবিত্র কুরআন নাযিলের জন্য, জিলহজ মাস পবিত্র হজের জন্য। তেমনি বারো রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দুনিয়ায় আগমনের দিন।

 

তিনি মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে তশরিফ আনেন।  ঈদে মিলাদুন্নবীর শিক্ষা হোক মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকে অনুসরণ করা। হযরত মুহাম্মদ (সা.) দিয়েছেন বিশ্বকে সভ্যতা ও সংস্কৃতির শিক্ষা। অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ মানবজীবন পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে যে নীতিমালা তিনি দিয়েছেন তা সর্বকালের মানুষের জন্য অনন্যভাস্বর ও সবচে’ বেশি কার্যকর। মুহাম্মদ (সা.) মানবসভ্যতার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটান। এমনকি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারা সংযোজিত হয় তখন থেকে। জ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তিনি পালন করেন দিকনির্দেশকের ভূমিকা। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে নবী মোস্তফা (সা.) উপস্থাপিত ইসলামী বিধানের যতো মিল রয়েছে তা অন্য কোনো মতাদর্শের সঙ্গে মোটেও নেই।

যে কারণে মুসলমানগণ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রায় ৮শ’ বছর প্রাধান্য বিস্তার করেছিলো, দিয়েছিলো নেতৃত্ব। পরবর্তীতে মুসলিমশাসকদের বিলাসিতা, লোভ-লালসা, অদূরদর্শিতা এবং সর্বোপরি মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ে মুসলমানরা। যতোদিন পর্যন্ত মুসলমানরা মহানবী (সা.)-এর আদর্শকে ধারণ ও লালন না করবে ততোদিন পর্যন্ত মুসলিম জাতির দুঃখ দুর্দশা ঘুচবে না।

 

মহানবী (সা.) এর জীবনচরিত-সুন্নাহ হলো আল্লাহর কুরআনের বাস্তব দিক। যারা এ সুন্নাহর পুরোপুরি অনুসরণ করবেন, এ সুন্নাহকে বাস্তবায়ন করার কাজে ব্রতী হবেন তাঁদের জন্যই হবে রাসূলের জন্মদিবস আনন্দের। যারা প্রতিবছর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে কেন্দ্র করে নিজের, পরিবারের, সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক কাজকর্মকে রাসূলের জীবনের সাথে মিলাবেন, সে আয়নায় নিজেদেরকে দেখবেন, নিজেদের দোষ চিহ্নিত করে পরবর্তী বছরের জন্য প্রস্তুতি নেবেন তাঁদের জন্য হবে এ দিবস ঈদের দিন। কিন্তু যে দেশে সংবিধান আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষকেই ক্ষমতার উৎস বলা হয়- সে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন আল্লাহর রাসূলের সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

যে ব্যক্তি সুদ খায়, সুদ দেয়, সুদী কারবার করে, ঘুষ খায়, ঘুষ দেয়, ঘুষের লেনদেনে জড়িত, যে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রশাসনে দুর্নীতি ঢুকায়, যে ব্যবসা-বাণিজ্যে পরকে ঠকানোর ব্যবস্থা করে, যে মালিক অন্যায়ভাবে তার শ্রমিকদের ঠকায় ও শ্রমের মর্যাদা দেয় না, যে শ্রমিক কাজে ফাঁকি দেয় তার জন্য রাসূলে খোদার জন্মদিন হবে ভয়ের দিন, দুঃখের দিন। তার জন্য এ দিবস কিছুতেই ঈদ বা খুশির হতে পারে না। যে মিলাদ মাহফিলে রাসূলের জীবনচরিত আলোচনা হয় না, সুদ ঘুষ ও চোরাচালানির পয়সা দিয়ে যেখানে মিষ্টি হালুয়া ক্রয় করা হয়, তাদের এ মাহফিল ও পয়সা ব্যয় রাসূলের সাথে মশকরা করার মতো। যে আলেম সামান্য কিছু পয়সার বিনিময়ে রাসূলের নির্দেশিত সত্যকে গোপন রাখে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে না, সামান্য দাওয়াতের জন্য সুদখোর, মদখোর, জুয়াড়ি, বেনামাজী, খোদাদ্রোহীর সাথে সম্পর্ক রাখে, তাদের ঈদে মিলাদুন্নবী পালন হবে বনি ইসরাইলের স্বার্থান্বেষী দরবারি আলেমদের মতো যাদেরকে কুরআনে কুকুর বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।

 

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে : ‘তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও, যাকে আমি দিয়েছিলাম নিদর্শন। সে তা বর্জন করে (তাকে নিদর্শন মুক্ত পেয়ে) শয়তান তার পেছনে লাগে, আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আমি ইচ্ছা করলে এ সব (নিদর্শন) দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করতাম। কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে- তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়। তার ওপর তুমি বোঝা চাপালেও সে হাঁপাতে থাকে আর বোঝা না চাপালেও সে হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এইরূপ। তুমি ঘটনা বলে দাও যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সূরা আরাফ : ১৭৫-১৭৬)

তাই আজকের সমাজে বিদ্যমান সকল অন্যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে শির্ক থেকে মুক্ত করার জন্য মুসলিমবিশ্বের ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একমাত্র পথ হলো আল-কুরআনকে আঁকড়ে ধরা, মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহকে বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। তার আদর্শ বিরোধী কোনো দল, জোট-মহাজোট করা যাবে না। প্রিয়নবী মুহাম্মদ (স.) সমস্ত সৃষ্টির প্রতি দয়া করেছেন। তিনি কোনো সৃষ্টির প্রতি অবজ্ঞা অবহেলা দেখান নাই। সমস্ত ধর্মের মানুষকে তিনি মানুষ হিসেবে দেখেছেন।

 

মানবতা আর ভালোবাসা দিয়ে প্রিয়নবী সমাজকে ভালোবেসেছেন। ধর্মের কারণে ইচ্ছে করে বল প্রয়োগ করে তিনি যুদ্ধ বাধাননি। কাফির মুশরিক যুদ্ধ বাধালে সেখানে তিনি প্রতিরোধ করেছেন। তার আদর্শ বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য। তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর নবী। রাহমাতুল্লিল আলামীন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তার সবকিছুই মানবকল্যাণে নিহিত। নবীর প্রতি সর্বাবস্থায় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রাখতে হবে। কোনো ইবাদতবন্দেগীতে নবীর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা না থাকলে সে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। আর তাই ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নবীর এ চিরন্তন দাওয়াত পৌঁছানোর এবং তাঁর সাথে ভালোবাসা গড়ে তোলার মোক্ষম সময়। আসুন, ঘরে ঘরে রাসূলের জীবনচরিত আলোচনা ও বাস্তবে তা পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। ঈদে মিলাদুন্নবী থেকে আমরা যেন কিছু শিখতে পারি এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

 

লেখক: আজহার মাহমুদ, প্রাবন্ধিক

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট