চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের সুরক্ষায় গুচ্ছ পদক্ষেপ

চালু হচ্ছে ‘মুসানেড সিস্টেম’

৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

এখন থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের দেখভালের দায়িত্ব দুই দেশের নিয়োগকারী সংস্থার উপর বর্তাবে। তবে তাদের সুরক্ষায় নজরদারি জোরদারে সরকারিভাবে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মধ্য প্রাচ্যের দেশটিতে ‘নির্যাতিত’ হয়ে থেকে একের পর এক নারী কর্মীর দেশে ফেরার মধ্যে সম্প্রতি রিয়াদে যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সোমবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জাহিদ হোসেন বলেন, নারী কর্মী যতদিন কর্মরত থাকবেন, ততদিন তার দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের রিক্রুটিং এজেন্সি (নিয়োগকারী সংস্থা) বহন করবে। যে সকল নারী কর্মী কাজ ত্যাগ করে পলাতক হয়েছেন, তাদেরকে পুলিশ কোনোভাবেই নিয়োগকর্তার কাছে কাছে হস্তান্তর করবে না। নারী কর্মীরা কর্মকাল পূর্ণ করলে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সি বহন করবে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে।- বিডিনিউজ
কয়েক বছর আগে গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশ সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো শুরুর পর থেকে সেদেশে গৃহকর্তার হাতে নানা ধরনের নির্যাতনের খবর আসতে থাকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল না।
এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে আসার পর তাদের মুখে সেখানে যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে আসার পর বিভিন্ন নারী সংগঠন সরব হয়।

রক্ষণশীল দেশটিতে নারী কর্মী না পাঠানোর দাবি উঠেছে জোরেশোরে ওঠার পর সম্প্রতি জাতীয় সংসদে আলোচনায় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সৌদি আরবে আর কোনো নারী গৃহকর্মী না পাঠানোর দাবি তোলেন। এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৭ নভেম্বর রিয়াদে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যৌথ কারিগরি কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা ও সৌদি আরবের পক্ষে শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট মিনিস্টার জাবের আব্দুলরহমান আল মাহমুদ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। সেখানে প্রবাসী নারী কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। ওই সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরতেই সোমবার সাংবাদিকদের ডাকা হয়।
এখন থেকে সৌদি আরবে কোনো নারী গৃহকর্মী পাঠানোর আগে বাংলাদেশ গৃহকর্তার পারিবারিক বিষয়সহ প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ খতিয়ে দেখবে বলে জানান যুগ্ম সচিব জাহিদ।
এজন্য সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ইলেকট্রনিক প্লাটফর্ম ‘মুসানেদে’ নারী কর্মী, সৌদি আরব-বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি এবং গৃহকর্তা- সবার যোগাযোগের বিস্তারিত ঠিকানা, গৃহকর্তা পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যাদি, নারী কর্মীর আগমনের তারিখ, গৃহকর্তার কাছে হস্তান্তরের তারিখ, গৃহকর্মীর দেশের ফেরার বিষয়ে সব তথ্য সন্নিবেশিত করার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুসানেদ সিস্টেমে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি ’অ্যাপরুভাল উইন্ডো’ স্থাপনের বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

তিনি বলেন, নিয়োগকর্তা পরিবর্তন, নতুন চুক্তি বা নবায়ন ও দেশে ফেরা সংক্রান্ত তথ্যাদি ছাড়া অন্যান্য তথ্যাদি এর মধ্যে হালনাগাদ করা হয়েছে। অবশিষ্ট তথ্যাদি হালনাগাদের কাজ চলমান রয়েছে। যদি নারী কর্মী মেয়াদ শেষে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই চুক্তি নবায়ন করতে হবে এবং এ নবায়ন বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, কোনো বিপদগ্রস্ত নারী কর্মীর সুরক্ষার বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠলে সৌদি আরবের সুরক্ষা ও সহায়তা বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট শ্রম কল্যাণ উইং বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন।
সভায় ভিসা বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে উভয় দেশ একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বলেও তিনি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এবার আগের তুলনায় অনেক আন্তরিক মনে হয়েছে। সে আলোকে প্রশিক্ষণ, নিয়োগ সবক্ষেত্রে বড় রকমের পরিবর্তন আসবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট