চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ আনফিট গাড়ি, অসুস্থ প্রতিযোগিতা : প্রধামন্ত্রী

২৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:২২ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যান চলাচল এবং ওভারটেকিংয়ের মতো অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। রাজধানীর খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।-বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওভারটেকিং নামক অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চালনা করা দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যদি অহেতুক নিয়মের বাইরে গিয়ে গাড়ি বা ট্রাকের আকার পরিবর্তন করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আমাদের ট্রাফিক পুলিশকেও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড্রাইভারদেরও দোষ রয়েছে, কোনো গাড়ি তাদের ওভারটেক করলে যেন মাথা খারাপ হয়ে যায়, ওই গাড়িকে তাদেরও ওভারটেক করতেই হবে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি রাস্তা কেমন লোড নিতে পারে, একটি সড়কে কী ধরনের দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে, তার একটি আকার নির্দিষ্ট করা থাকে। অথচ আমাদের দেশে দেখা যায়, অধিক মুনাফার আশায় আসন বৃদ্ধির জন্য বা অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে এক্সট্রা ক্লাম দিয়ে দুই পাশে বেআইনিভাবে গাড়ির আকার বাড়িয়ে নিচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।’

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথভাবে দায়িত্বপালনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা- এই দায়িত্ব শুধু সরকারের নয় বা গাড়ি চালকের না। পথচারী থেকে শুরু করে জনগণের, সব নাগরিকের দায়িত্ব। সবাই যার যার দায়িত্ব হিসেবে পালন করবেন। তিনি বলেন, যারা পথচারী তাদের নিজেদের দায়িত্ব আছে। যারা গাড়িতে চলেন, তাদের দায়িত্ব আছে। বা যারা গাড়ি চালান, তাদেরও দায়িত্ব আছে। শেখ হাসিনা বলেন, সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। দেশটা আমাদের। একটা মানুষের ক্ষতি হলে, সে যে-ই হোক, সে তো কোনো না কোনো পরিবারের ভবিষ্যৎ। ওই পরিবারের কী হয় সেটাও পরে চিন্তা করতে হয়।

চালকদের একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি না চালানো, দূরপাল্লার যানবাহনে বিকল্প ড্রাইভারের ব্যবস্থা রাখা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা, চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করাসহ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
চালক-পথচারী সবাইকে সচেতন ও নিয়ম মানার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ সড়ক করতে গেলে এটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এছাড়া আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে, কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটলে ড্রাইভারকে গালি দেওয়া হয়। হ্যাঁ, আমাদের ড্রাইভারদেরও দোষ আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, আমি শুধু ড্রাইভারদের দোষারোপ করব না। আমাদের যারা পথচারী একটি দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য তারাও কিন্তু অনেকটা দায়ী। দেখা যায় কেউ কোন নিয়মকানুন মানেন না।

রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার ও নিয়ম মানার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে শুধু হাত দেখিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা, এটাতো একটা যন্ত্র, এটা থামতেও সময় লাগে। এই বোধটাও তো আমাদের সবার থাকতে হবে। পথচারীদের তো এই বোধটা থাকতে হবে। এই জ্ঞানটা থাকতে হবে।

সড়কের কিছু আইন আছে, যেটা মেনে চলতে হয়। এছাড়া সড়ক আইন বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সচেতনতাও সৃষ্টি করা হয় না। এটাও আরেকটা সমস্যা। এ জন্য বারবার বলেছি স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা যেসব প্রতিষ্ঠানে অনেক লোক কাজ করে, তাদের মাঝেও এই সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে প্রয়োজন। চালকদের যথাযথ বিশ্রাম, সময় মতো খাবার নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখা এবং হেলপারের হাতে গাড়ি চালাতে না দেওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

গাড়ির মূল নকশা পরিবর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্টদের সব সময় বলে আসছি। আমি আবারও বলছি; যেহেতু এখানে মন্ত্রী, সচিব সবাই আছেন, তাদের বলবো- কেউ যদি এ ধরনের নিয়মের বাইরে গাড়ির সাইজ বা ট্রাকের সাইজ কোনো কিছু বাড়ান, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশকেও এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে কঠোর হওয়া ও জরিমানা আদায় এবং ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার পেশাদার নতুন এক লাখ দক্ষ গাড়ি চালক তৈরি; আরও তিন লাখ গাড়ি চালক তৈরির জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া; ১৭টি জেলায় ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার ও ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট