চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভাসান চরে যেতে রাজি রোহিঙ্গারা

ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে পারে কার্যক্রম

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম হ টেকনাফ

২১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:১৮ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে রোহিঙ্গারা নোয়াখালীর আলোচিত দ্বীপ ভাসান চরে যেতে রাজি হয়েছেন। বন্যার ঝুঁকির আশঙ্কা সত্বেও এই দ্বীপে পাঠাতে সরকারি উদ্যোগে মিয়ানমারের শরণার্থীরা রাজি হয়েছেন বলে বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার ভাষান চরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে প্রথম দফায় পাঠাতে চায়। সীমান্তের শরণার্থী শিবিরগুলোতে অতিরিক্ত রোহিঙ্গার চাপ কমিয়ে আনতে চায় সরকার। উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করছে।

বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার মাহবুব আলম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম তদারককারী কর্মকর্তারা পরিদর্শনের জন্য ভাষান চরে যাবেন। এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভাষান চরে স্থানান্তরে ছয় থেকে সাত হাজার রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে’। তবে কবে থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হতে পারে সেবিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি। অন্যদিকে ভাষান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নৌ-বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আগামী ডিসেম্বর থেকে এই কার্যক্রম শুরু হতে পারে। দিনে গড়ে ৫০০ শরণার্থীকে পাঠানো হতে পারে’।

দীর্ঘদিন পর স্বেচ্ছায় কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছেন। এরকম ১৭ টি পরিবারের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কিছু পরিবার স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের এরকম একটি তালিকা বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছেছে। তালিকায় ১৭টি পরিবারের নাম আছে। তাদের একটি করে ফরম দেওয়া হয়েছে। যার ওপরে লেখা ছিল ‘ভাসানচরে স্থানান্তরে আগ্রহী বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তালিকা। ফরমে ৬টি তথ্যর ঘর রয়েছে। ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে এমন পরিবারগুলোর একটি তালিকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাসানচর, রোহিঙ্গাদের কাছে যেটি ঠেঙ্গার চর নামে পরিচিত, ওই দ্বীপে যেতে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে এখন বেশ সম্মতি পাওয়া যাচ্ছে। তবে যে তালিকা হাতে পেয়েছি সেটি এখনও চূড়ান্ত নয়। বিষয়গুলো সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের তালিকা নেওয়া হচ্ছে। সেটি এখনও চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটা অত্যন্ত ভালো দিক যে তারা স্বেচ্ছায় সেখানে যাওয়ার জন্য সম্মতি জানাচ্ছে’। তবে এ পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছেন তা তিনি উল্লেখ করেননি।

টেকনাফের লেদা, নয়াপাড়া ও জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে, সেখানকার বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেও এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

রোহিঙ্গারা জানান, ১৭ অক্টোবর বিকালে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি, পুরনো-নতুন ১৫ জন রোহিঙ্গা নেতা, জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএমসহ কিছু এনজিও কর্মকর্তা ভাসানচরে যাওয়ার বিষয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে রোহিঙ্গা নেতাদের নিজ নিজ শিবির থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে বলা হয়েছে। এসময় তাদের কাছে ফরম দেওয়া হয়। আগেরদিন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহাবুব আলম তালুকদার লেদা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন।
স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি হওয়া নুর হোসেন (৫০) নামে এক বৃদ্ধ রোহিঙ্গা বলেন, ‘ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা ঘর-বাড়িগুলোর ভিডিও মোবাইল ফোনে আমাদের দেখিয়েছেন ক্যাম্প ইনচার্জ। এগুলো দেখে মনে হয়েছে সেখানে গিয়ে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো হবে। ফলে পরিবারের চার সদস্যসহ আমি যেতে রাজি হয়ে তালিকায় নাম দিয়েছি। তবে সেখানে যাওয়ার আগে যদি একবার ঘুরে এসে সেখানকার অবস্থা এখানখার রোহিঙ্গাদের বোঝানো যেতো, তাহলে আরও অনেকে ভাসানচরে যেতে রাজি হতো বলে মনে করি’।

টেকনাফ লেদা ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘আমার শিবির থেকে বেশ কিছু পরিবার ভাসানচরে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। বিষয়টি রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে ভাসানচরে উন্নত আবাসস্থল থাকার বিষয়টি রোহিঙ্গাদের ভালো করে বোঝানো গেলে সেখানে যেতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা বাড়বে’।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পে অবস্থানকারী বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এই অঞ্চলের জন্য অনেক বড় রকমের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এখান থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাও সরানো যায়, তাহলে কিছুটা হলেও বোঝা কমবে। রোহিঙ্গারা যে এখন স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে সেটা বেশ ভালো দিক’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট