চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ বহিষ্কার ১৯

আবরার খুনের জের, আন্দোলনে অবিচলশিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

১২ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে খুনের জেরে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে আবরার খুনে অভিযুক্ত ১৯ জন শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গতকাল বিকালে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের টানা দেড় ঘণ্টার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুয়েট অডিটোরিয়ামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই উপাচার্য তাদের এ দুটি দাবি পূরণের কথা জানান। শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, আবরার হত্যাকা-ে এজহারভূক্ত বুয়েটের ১৯ আসামিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে গত রবিবার মধ্যরাতে বুয়েটের ছাত্রদের আবাসিক কক্ষে আবরার ফাহাদ নামের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগোর এক ছাত্রকে পিটিয়ে খুন করে তারই সহপাঠীরা। খুনকা-ে অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। নিহত আবরারের বাবার বরকত উল্লাহ-র দায়ের করা মামলার ১৯ আসামির মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের দু’জন ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে খুনের দায় মাথায় নিয়েছেন বলে পুলিশ জানায়। ১৩ জনকে পুলিশী হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আবরার হত্যার জেরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ও উপাচার্যের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গত ৫ দিন ধরে টানা আন্দোলন করে চলেছে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের এ সব দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশের নাগরিক সমাজও। তবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার কথায়- ‘আমি নিজেই তো ছাত্র রাজনীতির প্রডাক্ট।’ তবে, তিনি মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রশাসন চাইলে তারা তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে।

এদিকে, বুয়েটের ভিসির দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শুধু আশ্বাস নয় দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের এই ঘোষণার পর অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে যান শিক্ষকরা। এরপর অডিটরিয়াম থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন। আগামী ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত রাখারও দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম চলতে পারে, একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। দাবি বাস্তবায়নে আপনাদের যতটুকু সময় দরকার আমরা দিতে রাজি আছি। তার আগ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। আবরার খুনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া যাবে না বলে দাবি করেন তারা।
এর জবাবে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তারপরও কেন বুয়েটের পরিস্থিতি অস্থির করার চেষ্টা করছো? কেন ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছো? তিনি বলেন, যে কোনোভাবেই ভর্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নিতে হবে। আমরা তোমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছি। তোমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলছি না, আমরা শিক্ষকরা তোমাদের পাশে রয়েছি। তবে কেন বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছো?
ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে তিনি ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা ড. মিজানুর রহমানের পরামর্শে সাড়া দেননি।

বৈঠকে বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেন ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। বলেন, ‘আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করেছি, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আবরার আমার সন্তানের মতো ছিল। তোমাদের যেমন কষ্ট লাগছে তার মৃত্যুতে আমারও অনেক খারাপ লেগেছে। এটি আমি মেনে নিতে পারিনি। তার মৃত্যুতে দুঃখ তোমরা পেয়েছ, আমিও পেয়েছি। আমরা সকলেই মর্মাহত।’

বুয়েটের হলে হলে অভিযান : গতরাত থেকেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হলে হলে অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ দফতরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। গতকাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের আলোচনা শেষে অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বুয়েটের সব হলে পাঁচজন করে সিনিয়র শিক্ষক নিয়ে অভিযান চালাবে বুয়েট প্রশাসন। কার বিরুদ্ধে বা কোন বিষয়ে এই অভিযান চালানো হবে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিটি হলেই বহিরাগতরা থাকে, সাবেক শিক্ষার্থী থাকে, তাদের বের করে দেয়া হবে। এ ছাড়া মাদক ও অস্ত্রশস্ত্র যদি থাকে তা উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, পাস করেও ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকছেন হলে। তিন জনে রুমে একজন থাকা ও রাজনৈতিকভাবে দখল করা রুমের দখল মুক্ত করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট