চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আনিস বহিষ্কার

যুবলীগ চেয়ারম্যান কোথায় জানেন না নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

১২ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

অফিসের পিয়ন থেকে হঠাৎ করে দলের কেন্দ্রীয় নেতা বনে যাওয়া যুবলীগ দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে এ বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। বৈঠকে তার উপস্থিত না থাকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে চলছে কানাঘুষা! সূত্র জানায়, সংগঠনে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন দলটির একদা ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে। সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর উত্তরায় সংগঠনের একটি ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এরপর থেকে তার দেখা পাচ্ছেন না নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর নেতা-কর্মীদের অনেকে ধারণা করেছিলেন, তিনি সংগঠনের কার্যালয়ে আসবেন। তবে গতকাল যুবলীগের বৈঠকেও তিনি উপস্থিত হননি। যুবলীগের বৈঠকে ওমর ফারুক চৌধুরী কেন নেই এমন প্রশ্ন করা হলে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিয়ার রহমান দীপু বলেন, তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। অন্য কারো সাথে কথা হয়েছে কিনা সেটা আমি বলতে পারব না।

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক হিসাব তলব ও অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আসার পর ওমর ফারুক চৌধুরী প্রকাশ্যে আসছেন না। কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কে তার প্রতিষ্ঠিত যুব গবেষণা কেন্দ্রের কার্যালয়ে তাকে যেতে দেখা যায়নি। নিজ নিজ বাসা থেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেনা। নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। কারো ফোনও ধরছেন না তিনি।

যুবলীগের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে যুবলীগের আসন্ন সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন কে সেটা নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যুবলীগের একটা বড় অংশ সম্মেলনে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে সভাপতি হিসেবে চান না। তবে বৈঠকে এক প্রেসিডিয়াম সদস্য সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় সরাসরি স্টেটমেন্ট দেয়া ঠিক হচ্ছে না। উনি যখন সংগঠন চালিয়েছেন, তখন আপনারা কেউ উনার ভুলগুলো শুধরে দেয়ার চেষ্টাও করেনি। বরং বিভিন্ন সময়ে যুবলীগ চেয়ারম্যানের সাথে বিভিন্ন কর্মকা- এনজয় করেছেন।’ এসময় যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতিত্ব কে করবেন সে বিষয়ে আলোচনা হয়, তবে সিদ্ধান্ত আসেনি। যুবলীগের সম্মেলনে কে সভাপতিত্ব করবেন সে বিষয়ে যুবলীগের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজু বলেন, এটি আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমরা খুব শিগগির নেত্রীর সাথে দেখা করতে যাবো। নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে এবং আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায় বলেও ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। এর পর গণমাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকার ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো পরিচালনার খবর প্রকাশ হয়। ১৮ নভেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস, ওয়ান্ডারার্স এবং গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মদ ও ৪০ লাখের বেশি টাকা উদ্ধার করে র‌্যাব। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে ওই দিনই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

পাশের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকেও জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ক্লাব পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। এর পর ধানম-ির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়েও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ পায় র‌্যাব। অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় ক্লাবের সভাপতি কৃষক লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।

এর মধ্যে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে। দুবাই থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট