চট্টগ্রাম রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

হঠাৎ বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রামসহ ৯ জেলা

অনলাইন ডেস্ক

২২ আগস্ট, ২০২৪ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ত্রিপুরার ডম্বুর হাইড্রো ইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে পাহাড়ি ঢল, ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পানিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রামসহ দেশের নয়টি জেলা। বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন এসব জেলার বেশিরভাগ মানুষ।

 

এছাড়া বন্যার পানিতে গ্রামীণ সব সড়ক ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো- চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর।

 

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের সবকটিই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলে ভাঙন দেখা দিয়েছে ধুরুন নদের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে।

 

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি সদর ও পানছড়ি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দীঘিনালা উপজেলায় আরও অবনতি হয়েছে। দীঘিনালায় এখনও হাজারো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। দীঘিনালার সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা ও লংগদু উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

 

ফেনী : এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ফেনীর তিন উপজেলা পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায়। প্লাবিত হয়েছে এই তিন উপজেলার শতাধিক গ্রাম, পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা পরিস্থিতিতে ডিঙি নৌকায় পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা শুরু করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। উদ্ধারে নামেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও।

 

ফেনীর আনন্দপুর ইউপির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন ফেনীর বাসিন্দারা। গত ৩৬ বছরে অনেকবার বন্যা হলেও এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি। এবারের বন্যায় পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

নোয়াখালী : নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিনদিন ধরে বেশিরভাগ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, কাজি কলোনি, লইয়ার্স কলোনি, রশিদ কলোনি ও কৃষ্ণরামপুর এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির আঙিনায় বৃষ্টির পানি থই থই করছে।

 

কুমিল্লা : কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর তীরঘেঁষে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত ১০ বছর গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি।

 

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে মনু নদের পানি বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য প্রধান তিন নদ-নদী ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর বাঁধ ভেঙে, উপচে ৬২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

 

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বুধবার ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নদী ও হাওর এমনিতেই ভরা বর্ষার পানিতে টইটম্বুর। তাই পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের খোয়াই নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার বিকেল পাঁচটায় খোয়াই নদের মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে আছে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ।

 

লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক ও নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লাখ পরিবার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার রামগতি ও কমলনগর, রায়পুর ও সদর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। এছাড়া পুরো জেলার সর্বত্র পুকুর ও মৎস্য খামারের পাড় ভেসে গিয়ে বেরিয়ে গেছে হাজার হাজার পুকুরের কয়েক কোটি টাকার মাছ।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট