চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

যুবলীগ নেতা খালেদ ভুইয়াসহ আটক ১৪৩

সরকারের কঠিন একশন শুরু

ক্যাসিনোতে অভিযান, ২৪ লাখ টাকাসহ বিপুল মদ জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৯ পূর্বাহ্ণ

যুবলীগের ছত্রচ্ছায়ায় দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন একশন শুরু করেছে সরকার। গতকালের প্রথম দিনের ওই একশনে আটক করা হয়েছে ঢাকা মহানগর যুবলীগের দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। গুলশানে তার বাসা ঘেরাও করে তাকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়ার মালিকানাধীন ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে আটক করা হয়েছে আরও ১৪২ জনকে। বিপুল পরিমাণ মদ ও অর্থ জব্দ করা হয়। শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি। পুলিশ বলেছে, সন্ধ্যায় ওই ক্লাব থেকে দুই নারীকর্মীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। ক্লাবে পাওয়া যায় মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন। সেখান ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয় বলে জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম। পুলিশ আরও জানায়, ঢাকায় অন্তত ৬০টি ক্যাসিনো আছে, যা অবৈধ। কিছু অপরাধী এসব ক্যাসিনোর ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরের পর গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে খালেদের বাসা এবং ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান শুরু করেন র‌্যাব সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা খালেদকে ধরতে অভিযান নামে র‌্যাব। ওই বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে। আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেন, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে, যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরকেও দমন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এমন কঠোর বার্তার পরই অভিযানে নামলো র‌্যাব।

গতকাল সন্ধ্যায় র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, আমার নেতৃত্বে ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান হয়। জুয়া খেলা অবস্থায় অভিযানে নারী ও পুরুষ মিলে ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সারওয়ার আলম আরও বলেন, ক্যাসিনোর ভিতর থেকে প্রচুর টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব টাকা আমরা পুরোপুরি গণনা করতে পারিনি। অভিযান শেষে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে তারা গ্রেপ্তার করেন।

ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মত নানা অভিযোগ রয়েছে এই নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও। মতিঝিলের যুবলীগ নেতা রিয়াজউদ্দিন মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ২০১২ সালের পর মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায় ঢাকার এক অংশের নিয়ন্ত্রণ আসে খালেদের হাতে। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি। রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগের এই নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াং ম্যানস নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।

এছাড়াও, খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি মাছের একটি হাট বসান এ নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করেন তিনি। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন। গত মঙ্গলবার থেকে টানা দু’দিন ধরে রেল কর্তৃপক্ষ শাহজাহানপুরে রেলওয়ে কলোনীর অবৈধ ঘর-বাড়ি ও দোকান পাট উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। জানা যায়, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ এই যুবনেতার হাতে। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন খালেদ ভূঁইয়া। ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট