চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইউপি সদস্য হওয়ার পরও মাটি কাটার কাজ করছেন তিনি

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

নারী ইউপি সদস্য ববিতা খাতুন। সংসার চালাতে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মাটি কাটার কাজ করছেন তিনি। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি তার পেশা বদল করেননি।
তিনি পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য।

জানা গেছে, ববিতা খাতুন ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মূলগ্রাম ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের জায়দুল ইসলামের স্ত্রী।

নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতোমধ্যে ববিতা শপথ নিয়েছেন। তবে তিনি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীর অধীনস্ত পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করার (আরইআরএমপি-৩) কাজ থেকে সরে আসেননি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মাটি কাটার কাজ করছেন তিনি।

কয়েক বছর আগে স্বামী তাকে ত্যাগ করে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছেন। পরিবারে তার ১৮ বছর বয়সী ছেলে আর এক ছোট বোন রয়েছে। ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর সেও আলাদা হয়ে গেছে।

ইউপি সদস্য ববিতা খাতুন বলেন, আমার মা একবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে যান। পরের বার নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাই। এবার আবার নির্বাচনে দাঁড়ায়। জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচনে আমি কোনো টাকা-পয়সা খরচ করতে পারিনি। গ্রামের মানুষ সহযোগিতা করেছেন। তারা সবাই এক জোট হয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছি বলে অনেক বড় কিছু হয়ে গেছি সেটা আমি মনে করি না। জীবিকার জন্য আমাকে কাজ করতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, এলাকার মানুষের প্রয়োজন হলে এবং পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান সাহেব খবর দিলে আমি পরিষদে যাই। পরিষদের কাজ শেষ হলে আবার কাজে যোগদান করি। মানুষ আমাকে অনেক আশা নিয়ে ভোট দিয়েছে। আমি গরিব, অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, মেয়েটা অনেক পরিশ্রমী। গত নির্বাচনে এলাকায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী বেশ টাকাওয়ালা হওয়ায় সে হেরে যায়। দারিদ্র্যতার কারণে সে মাটি কাটার কাজ করে। আমরাও পরিষদের পক্ষ থেকে বলেছি, তুমি তোমার কর্ম করো, বিশেষ প্রয়োজনে কিংবা দিনে একবার পরিষদে আসলেই হবে।

মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘সে আমার পরিষদের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাকে ব্যক্তিগতভাবে আমি মাটি কাটার কাজ না করতে বলেছিলাম। সে বলেছে, যতদিন পর্যন্ত পরিষদ থেকে কোনো বেতন/ভাতা না পাবে ততদিন সে এই কাজ করবে। তবে তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ও পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হবে।’

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) সৈকত ইসলাম বলেন, ‘ইউপি সদস্যে হয়েও মাটি কেটে জীবনযাপন করা সত্যি অবাক করার মতো ঘটনা। বিষয়টি আমি খোজঁখবর নিয়ে দেখি। তার জন্য ভালো কিছু করা যায় কি না।’

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট