ফি বছরের ন্যায় এবারও মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে রাহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে হাজির হয়েছে মাহে রমজান। এ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে কুরআনুল কারিম ও হাদিসে রাসুলে (সা.) বিস্তারিত আলোকপাত করা রয়েছে। এ মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মুসলিম নর-নারীর জন্য রোজা পালন করা ফরজুল আইন বা অবশ্য কর্তব্য। রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। রোজা হচ্ছে নিয়ত সহকারে সুবহি সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক যাবতীয় পানাহার ও  স্বামী-স্ত্রীর যৌনাচার থেকে বিরত থাকা। আল্ল­াহ পাক রোজার হকুম সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের প্রতি সিয়াম ফরজ করা হলো যেভাবে ফরজ করা হয় তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; উদ্দেশ্য হলো তোমরা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে (সুরা বাকারা, ১৮৩)।’

রমজান শুরুর  প্রথম দিকে এ মাসের গুরুত্ব ও বরকত ফুটিয়ে তুলে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের উদ্দেশে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের উপর এমন এক মহান মর্যাদা ও বরকতপূর্ণ মাস আসছে যাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। আল্লাহতায়ালা এ মাসের দিবাভাগে উপবাস ফরজ করে দিয়েছেন আর রাত্রি জাগরণ তথা সালাতুত তারাবিকে সুন্নাত করে দিয়েছেন।

আর যে ব্যক্তি এ মাসে সানন্দে স্বেচ্ছায় কোন একটি নেক আমল করবে সে অন্য মাসে ফরজ আদায়ের সাওয়াব পাবে আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে আল্লাহ পাক তাকে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করার সমতুল্য সাওয়াব দান করবেন (মেশকাত শরীফ)।’ মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ  খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়।’ ইমাম তিরমিজির বর্ণনায় উল্লেখিত হাদিসটির শেষাংশে আরো যোগ করা হয়েছে, ‘একজন ফিরিশতা রমজানে ডেকে বলে- হে কল্যাণ অন্বেষু, তুমি এগিয়ে যাও। আর হে অনিষ্টচারী, তুমি নিবৃত্ত হও। এভাবে শেষ রমজান দিন পর্যন্ত চলতে থাকে (বুখারী ও মুসলিম)।’

মাহে রমজানে মহাগ্রন্থ আল কুরআনসহ সকল আসমানী গ্রন্থ ও সহিফা নাজিল হয়। যাকাত-ওশর, দান-সাদাকা, সবর, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন সম্ভব হয় এ মাসে। তাসবিহ-তাহলিল, দু‘আ-দরুদ ও গভীর মুনাজাতে আত্মবিলীন হয়ে এ পবিত্র মাসে রোজাদার আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভ করেন। তাই রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে নিজেও বেশি বেশি ইবাদত করতেন এবং সাহাবিদেরকেও কোমর বেঁধে ইবাদতের জন্য উৎসাহ যোগাতেন। তাই আসুন, ঈমান-আমলে বলিয়ান হয়ে যথাযথ গুরুত্বের সাথে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায় ব্রতী হই।

পূর্বকোণ/এএ