চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

বায়োস্কোপ

তামিমুল করিম হৃদয়

২১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

বায়োস্কোপ, বাংলার হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্যের নাম। একসময় পথ-প্রান্তর, হাট-বাজার ও গ্রামীণ মেলাসহ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে দেখা যেত বায়োস্কোপ। আজকাল প্রযুক্তির কাছে অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বায়োস্কোপ, যা এক সময় ছিল গ্রাম বাংলার শিশু-কিশোরের চিত্ত বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

‘ওই দেখা যায়, কেমন মজা/ দ্যাখেন, তবে মক্কা-মদীনা/ তার পরেতে মধুবালা/এক্কা গাড়িতে উত্তম-সুচিত্রা।’ ‘কী চমৎকার দেখা গেল রহিম রূপবান আইসা গেল, ঢাকার শহর দেখেন ভালো, কী চমৎকার দেখা গেল’। বায়োস্কোপ দেখানোর চমৎকার দৃশ্য বর্ণিত হত এভাবেই। কাঁচের জানালায় চোখ রাখলেই ছবি আর কণ্ঠের বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে উঠত এক অজানা পৃথিবী।

আর গ্রামের ছোট শিশু বা কিশোররা মনের আনন্দে তা উপভোগ করতেন। স্বপ্নীল দুলদুল ঘোড়া, মক্কা-মদিনা, আজমির শরিফ, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ক্ষুদিরামের ফাঁসি আরও কত কিছু থাকে বায়োস্কোপ নামে ছোট্ট কাঠের বাক্সে।

বায়োস্কোপে সর্বোচ্চ ৬ জন একটি প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারতেন। রিল হিসেবে টিকিট মূল্য নির্ধারিত হত। প্রদর্শনীর সময়সীমা অনুযায়ী টিকিট মূল্য কম-বেশিও হত। আবার শহর অঞ্চল-গ্রামাঞ্চল ভেদে প্রদর্শনী মূল্যের তারতম্য ও ছিল।
গ্রাম্যমেলাগুলোতে প্রতি শো ১০ টাকা এবং বায়না শো তথা শহরাঞ্চলে শো প্রতি ৩০ টাকা নির্ধারিত হয়ে থাকত। মেলাকেন্দ্রিক এই পরিবেশনায় সাধারণত দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় থাকে বেশি। ভিড়ের অবস্থা অনুযায়ী রিল টানা দ্রুত-ধীর হত।

বায়োস্কোপের সাথে বাঙালিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। বিশেষ করে গ্রামবাংলার জনপদে বেড়ে ওঠা মানুষকে তো বটেই। তবে যারা শহরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী জীবনযাপন করে অভ্যস্ত কিংবা যাদের জন্ম একযুগ আগে তাদের কাছে হয়তো হাস্যকর এক বোকাবাক্স মনে হবে। কিন্তু বায়োস্কোপ মোটেও হাস্যকর কোনো বস্তু ছিল না, কিংবা ছিল না কোনো বোকাবাক্সও! প্রকৃতপক্ষে বায়োস্কোপ গ্রামবাংলার সিনেমা হল। রঙ-বেরঙের কাপড় পরে, হাতে ঝুনঝুনি বাজিয়ে বিভিন্ন রকমের আলোচিত ধারা বর্ণনা করতে করতে ছুটে চলত গ্রামের স্কুল কিংবা সরু রাস্তা ধরে। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তার পেছন পেছন বিভোর স্বপ্ন নিয়ে দৌড়াত গ্রামের ছেলেমেয়েরা। বর্তমান সময়ে গ্রামবাংলায় বায়োস্কোপ এমনই বিরল যে, জাদুঘরে রেখে দেয়ার জন্যও অন্তত একটি বায়োস্কোপ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট