ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : ইরাকের সরকার বিরোধী চলমান বিক্ষোভে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বুধবারও শহরের সড়কগুলো দখল করে রেখে বিক্ষোভকারীরা। তারা সঙ্গীত আর স্লোগানে মাতিয়ে রেখেছে রাজপথগুলো।
কেবল ইরাকে নয়, মধ্যপ্রাচ্যের আরও অনেক দেশে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে দেশের মানুষ। বিক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মিশর, ইয়ামেন ও লেবানন। বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয় মিশরে। মিশরের স্বৈরশাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি-র পদত্যাগের দাবিতে গত সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ উত্তাল হয়ে উঠেছিলো দেশটিতে। এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্পেনে স্বেচ্ছা নির্বাসেনে থাকা অভিনেতা কাম ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী (৪৩)। তবে এটি কড়া হাতে দমন করেছে মিশরের পুলিশ।
ইরাক, লেবানন এবং মিশরের মধ্যে ভিন্নতা প্রচুর। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য-জুড়ে গড়ে ওঠা এসব বিক্ষোভের চিত্র অভিন্ন। আর সব দেশেই এসব বিক্ষোভ লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। আর বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই তরুণ। মোটামুটিভাবে ধারণা করা হয় যে, এই অঞ্চলের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। তরুণ জনগোষ্ঠী যেকোনো একটি দেশের জন্য বিশাল জনসম্পদ। তবে তা কেবল তখনই যখন দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণদের প্রয়োজন পূরণে কার্যকর থাকে।
লেবানন, ইরাক এবং এই অঞ্চলের অন্য কোন দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে গ্রাস করছে হতাশা, যা সহজেই ক্ষোভে পাল্টে গেছে। এই অঞ্চলের প্রধানতম দুটো সমস্যা হচ্ছে, দুর্নীতি আর বেকারত্ব যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বেকারদের ওপর। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির একাধিক সূচক অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতি-গ্রস্ত অন্যতম দেশের তালিকায় ইরাকের অবস্থান।
লেবাননের অবস্থা কিছুটা ভালো, তবে খুব বেশি নয়। ইরাক এবং লেবানন-দুই দেশেই বিক্ষোভরত ব্যক্তিরা কেবলমাত্র সরকারের পদত্যাগের দাবিই তোলেনি। তারা সমগ্র প্রশাসন ব্যবস্থারই সংস্কার বা পরিবর্তনের দাবি তুলেছে।
ইরাকের প্রেক্ষাপটে মর্মান্তিক এক বাস্তবতা হল, সমাজে সহিংসতা দৃঢ়ভাবে জেঁকে বসেছে। ইরাকের রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের এখনো পর্যন্ত নেতৃত্বহীন অবস্থায় দেখা গেছে। কিন্তু সরকারের আশঙ্কা হচ্ছে সময় যত গড়াচ্ছে বিক্ষোভকারীরা তত বেশি সুসংগঠিত হয়ে উঠছে।
১৭ অক্টোবর লেবাননে বিক্ষোভ শুরু হয় যখন সরকার তামাক, পেট্রোল এবং হোয়াটসঅ্যাপ কলের ওপর কর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া। নতুন এসব কর দ্রুত প্রত্যাহার করে নেয়া হয় তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দেশটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সত্যিকারের উত্তেজনা নজরে আসছে।
তাহলে এটা কি নতুন করে আরব বসন্তরে সূচনা? এটা যেন ২০১১ সালের অসমাপ্ত কর্মকা-ের একটি প্রতীক। নিপীড়নকারী নেতাদের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করেছিল সেই বছরের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা আসেনি।
তবে সেই অভ্যুত্থানের ফলাফল এখনও অনুভূত হচ্ছে, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া এবং শক্তিশালী পুলিশি রাষ্ট্র মিশরে। কোথাও কোথাও আরও গভীর হয়েছে।