চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাল্টা হামলায় পাক সেনাসহ ২০ জন নিহতের দাবি ভারতের  

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের হামলায় ভারতীয় দুই সেনাসহ তিনজন নিহত হওয়ার পর ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানে পাল্টা হামলা শুরু করে। তংধার সেক্টরে পাক হামলায় নিহত হন দুই সেনা ও এক গ্রামবাসী।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের গোলাবর্ষণে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে থাকা অন্তত তিনটি পাকিস্তানি সামরিকঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। এতে পাক সেনাসহ ২০ পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন বলে দাবি ভারতের সেনাবাহিনীর। খবর আনন্দবাজার, এনডিটিভির ও দ্যা ডনের।

কিন্তু পাকিস্তানের দাবি, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে তাদের এক সেনা সদস্য ও ছয়জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলায়।

এর আগে উরির সেনাঘাঁটি এবং পুলওয়ামায় আধাসামরিক বাহিনীর ওপর হামলার জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের বালাকোটে অভিযান চালিয়েছিল ভারত। এবার জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে সেনাবাহিনী। অন্যদিকে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় ভোটের ঠিক একদিন আগে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস-আরজেডির মতো বিরোধী দলগুলো।

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সন্ধ্যায়। ভারতীয় সেনাদের দাবি, জম্মুর কাঠুয়ায় মনইয়ারি-চোরগলি এলাকা লক্ষ্য করে পাক রেঞ্জার্স মর্টার ছুড়লে আহত হন সাদিক আলি নামে এক ব্যক্তি।

এর পর রবিবার ভোর থেকেই কুপওয়ারার তংধার সেক্টরে গুলি চালাতে শুরু করে পাকিস্তান। ভারতের দাবি, জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটাতেই ওই হামলা চালানো হয়।

পাক হামলায় পদম বাহাদুর শ্রেষ্ঠ ও জামিল কুমার শ্রেষ্ঠ নামে দুই সেনা নিহত হন। পদম বাহাদুর আসামের গোলাঘাট জেলার বরপথারের বাসিন্দা। জামিল কুমারের বাড়ি নেপালের পাল্পায়। মৃত্যু হয় মো. সিদিক নামে তংধার এলাকার এক গ্রামবাসীরও।

জবাবে তংধারের উল্টো দিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নীলম উপত্যকায় থাকা ঘাঁটি লক্ষ্য করে প্রত্যাঘাত করে ভারতীয় সেনা। মর্টারের পাশাপাশি বফর্সের মতো কামানও ব্যবহার করে ভারত।

ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী বলেন, জঙ্গিঘাঁটিগুলো অস্থায়ী। প্রয়োজনে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে নিয়ে আসেন পাক সেনারা। আবার প্রয়োজনে সরিয়ে নিয়েও যান।

রবিবার সন্ধ্যায় ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেন, ‘জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করতেই কামান ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাথমিক যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে তিনটি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে।

৬-১০ জন পাক সেনা ও সমসংখ্যক জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সেনাপ্রধান।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পর থেকেই হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। পাকবাহিনী ৬০০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি ভারতের।

প্রাক্তন মেজর জেনারেল পি কে সেহগলের বক্তব্য, ‘‘পরিসংখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ওরা চাইছে বরফ পড়ার আগে কাশ্মীরে বড় ধরনের জঙ্গি অনুপ্রবেশ করাতে।’’

সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ মূলত পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নীলম উপত্যকায় জুরা, অঠমুকাম ও কুন্ডালসাহি-তে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। এতে লস্কর ই তইবা, জইশ ই মহম্মদ জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আজ সকালে তংধার সেক্টর লক্ষ্য করে পাকিস্তানের যে বাঙ্কার থেকে হামলা চালানো হয়েছিল নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সেটিও। অন্য দিকে পাক সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুরের বক্তব্য, ‘‘ভারতের ওই হামলায় এক পাক সেনা ও পাঁচ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় বন্দুক আপাতত শান্ত। পাকিস্তানের কড়া জবাবের পরে এখন ভারতীয় সেনা সাদা পতাকা উড়িয়ে নিজেদের নিহতদের দেহ ও আহতদের সরিয়ে নিচ্ছে। ভারতের ৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। দু’টি বাঙ্কার ধ্বংস হয়েছে।’’ ঘটনার ‘প্রতিবাদ’ জানাতে আজ ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার গৌরব অহলুওয়ালিয়াকে ডেকে পাঠায় সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক। পাশাপাশি ভারতের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি কতটা ‘ভিত্তিহীন’ তা প্রমাণে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ইমরান সরকার।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন