চট্টগ্রাম সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সর্বশেষ:

এইচএমপিভি নতুন ভাইরাস নয়, আতংকিত না হয়ে সতর্ক হোন

ডা. মো. জাকির হোসেন

১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১:২২ অপরাহ্ণ

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার পর মানুষ যেকোন নতুন সংক্রামক রোগের নাম শুনলেই আতংকিত হয়ে পড়ছে। গত বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের কর্তৃপক্ষ জানায় যে, চীনের কিছু অঞ্চলে এইচএমপিভি’র সংক্রমণ বেড়েছে। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি দেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়।

 

৯ জানুয়ারি বাংলাদেশেও এইচএমপিভি শনাক্ত হয়েছে বলে আইইডিসিআর জানিয়েছে। এরপর থেকেই মানুষের মনে ভয় ও শঙ্কা বিরাজ করছে। তবে এইচএমপিভি নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। ২০০১ সালে আবিষ্কৃত হলেও গবেষকদের মতে, আরও ৬০ বছর আগে থেকেই এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব নতুন নয়। আইসিডিডিআরবি এবং জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশে ২০০১ সালে এইচএমপিভি এর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। যা ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়।

 

বিআইটিআইডিতে আমাদের নিজস্ব গবেষণায় (অপ্রকাশিত) ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে আমরা চট্টগ্রামে এইচএমপিভি এর সংক্রমণের প্রমাণ পেয়েছি। যা বিআইটিআইডি ল্যাবে শনাক্ত হয়। গত নভেম্বরে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে এই গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এইচএমপিভি নতুন কোন ভাইরাস নয়। উপসর্গ দেখা দিলে শনাক্ত করারও প্রয়োজন নেই। অন্যান্য মৌসুমী ভাইরাসজনিত রোগের মতোই উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু ও বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি ও দীর্ঘদিন যারা শ্বাসযন্ত্রের রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাই অযথা আতংকিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।

 

নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানুন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুণ।

 

যে সকল মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছেন : ৫ বছরের নিচের শিশু ও বয়স্ক মানুষ। দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা (যেমন, হাঁপানি, সিওপিডি), দুর্বল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাক্তি, যে সকল রোগীর অন্যান্য অসুখও রয়েছে (যেমন, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, ক্যানসার, কিডনিজনিত জটিলতা ইত্যাদি)

 

যে সকল উপায়ে সংক্রমণ হতে পারে: কোভিড-১৯ এর মতো এইচএমপিভি সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে অন্যদের মধ্যে যে উপায়ে সংক্রমণ হয়: হাঁচি এবং কাশির নিঃসরণ থেকে, পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, যেমন স্পর্শ করা বা হ্যান্ড শেক, দূষিত বস্তু স্পর্শ করা।

 

উপসর্গ: সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ এবং শ্বাসকষ্ট, গুরুতর ক্ষেত্রে ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া বিশেষ করে যারা ঝুঁকিতে রয়েছেন।

 

এইচএমপিভি এর চিকিৎসা: এর কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই। শুধুমাত্র লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা প্রয়োজন, বেশিরভাগ লোকই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজেরাই সুস্থ হয়ে যান, লক্ষণগুলি গুরুতর হলে স্বাস্থ্য-সেবা প্রদানকারী অথবা চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।

 

প্রতিরোধে করণীয় :
সংক্রমিত ব্যক্তির জন্য : কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি ও কাশির সময় মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন, হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। হাঁচি ও কাশির পর কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। সংক্রমণ কমাতে এবং অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে ঘরে থাকুন।

 

অসংক্রমিত ব্যক্তির জন্য : হাসপাতাল/অধিক জনসমাগম পূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করুণ। সংক্রমিত ব্যক্তি বা দূষিত বস্তুর সংস্পর্শে আসার পর অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন, সংক্রমিত ব্যক্তি বা দূষিত বস্তুর সংস্পর্শে আসার পর কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। যারা অসুস্থ তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।

তথ্য সূত্র : ডব্লিওএইচও, ইউএস-সিডিসি, আইইডিসিআর।

 

লেখক: ল্যাব প্রধান, বিআইটিআইডি, ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম।

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট