চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অর্থনীতি: শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ড কী সুবিধা দেবে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের?

অনলাইন ডেস্ক

৯ অক্টোবর, ২০২২ | ১:৪৯ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সোমবার থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের লেনদেন শুরু হচ্ছে। এর ফলে দেশটির দুই স্টক এক্সচেঞ্জে এসব সরকারি বন্ডের কেনাবেচার সুযোগ পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ডে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীকে কেনাবেচার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি বন্ড ও শেয়ারবাজারে আসার আশা করছেন এই খাতের ব্যক্তিরা।

 

ট্রেজারি বিল ও বন্ড কী?

খরচ মেটাতে সরকার বিভিন্ন সময় জনগণ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সুদে ঋণ নিয়ে থাকে। দেশের উন্নয়ন, জরুরি প্রয়োজন বা বেতন-ভাতা দিতে সরকার এসব ঋণ নিয়ে থাকে।
ট্রেজারি বিল বা বন্ডের মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়। একে সরকারি সিকিউরিটিজও বলা হয়।

 

এগুলো হচ্ছে সরকারের ঋণপত্র। সাধারণত বিভিন্ন মেয়াদে ও সুদে সরকার এসব ঋণপত্র ইস্যু করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসব বন্ড নিলামে কেনা-বেচা হয়ে থাকে।

অনেক সময় বেসরকারি ব্যাংক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও সুদের বিনিময়ে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণপত্র বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে।

 

ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ডের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে এগুলোর মেয়াদকাল। ট্রেজারি বিল তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদের হয়ে থাকে। এটির যে প্রকৃত মূল্য, তার চেয়ে কম মূল্যে বা ডিসকাউন্টে সরকার এটি বিক্রি করে। ফলে ক্রেতা পরবর্তীতে পূর্ণ মূল্যে বিক্রি করে এর থেকে মুনাফা করে থাকেন।

তবে ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে দুই বছর থেকে শুরু করে ২০ বছর পর্যন্ত মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড রয়েছে। এসব বন্ডে সুদের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ থেকে শুরু করে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা তুলে নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

 

সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত যেকোন প্রতিষ্ঠান এসব নিলামে অংশ নিতে পারে। ব্যক্তি খাতের বাইরে বিনিয়োগের নিরাপদ উৎস হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাংক, আর্থিক খাত, বীমা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব বণ্ডে এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে।

 

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন,”‘সারা বিশ্বেই কিন্তু ট্রেজারি বন্ড বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশে বন্ডে বিনিয়োগ নিরাপদ হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এর প্রতি আগ্রহ এখনো কম। হয়তো সেটা প্রক্রিয়ার জটিলতা, সচেতনতার অভাব বা না জানার কারণে হতে পারে।”

কীভাবে ট্রেজারি বন্ড কেনা-বেচা করা যায়?

সাধারণত বাংলাদেশের মানুষ ব্যাংকের বিভিন্ন স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমে টাকাকড়ি বিনিয়োগ করে থাকেন। এর বাইরে সুদের হার বেশি থাকায় সঞ্চয়পত্র, বিনিয়োগের জন্য এখন মানুষের প্রধান পছন্দ।

 

কিন্তু সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। এছাড়া সেই বিনিয়োগের ওপরে করও দিতে হয়। ট্রেজারি বন্ডে এখানে কিছুটা ছাড় রয়েছে। যদিও মুনাফা গ্রহণের সময় পাঁচ শতাংশ কর দিতে হয়।

 

বাংলাদেশের নিবাসী বা অনিবাসী যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, ট্রেজারি বিল বা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এসব বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে অন্তত এক লাখ টাকা বা এর গুণিতক। এখানে বিনিয়োগের কোন সীমা নেই।

 

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ বিষয়ে বলা হয়েছে, এজন্য যেকোন ব্যক্তি ট্রেজারি বিল কেনার জন্য বিজনেস পার্টিসিপেন্ট আইডি (বিপি আইডি) খুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন। বাণিজ্যিক ব্যাংক এই হিসাব খুলতে সহায়তা করবে।

 

মেয়াদ পূর্তির আগে সরকার এসব বন্ডের মূল্য পরিশোধ করবে না। তবে ওভার দ্যা কাউন্টার বা সেকেন্ডারি মার্কেটে যেকোনো সময় এসব বন্ড ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।

 

তবে এখন থেকে পুঁজিবাজারে কেনা-বেচা করার সুযোগ তৈরি হওয়ায় যেকোন সময় ট্রেজারি বন্ড কেনা বা বিক্রি করা যাবে। বাজারে চাহিদার ওপরে নির্ভর করবে এসব বন্ডের দরদাম।

শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ড লেনদেন

সোমবার থেকে বাংলাদেশের দুইটি স্টক একচেঞ্জে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হচ্ছে।

 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের যে বিভাগ বন্ড অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলো সমন্বয় করে, সেই বিভাগের সমন্বয়ক সৈয়দ আল আমিন রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ২৫২টি ট্রেজারি বন্ড রয়েছে, সোমবার থেকে দুইটি স্টক এক্সচেঞ্জে সেগুলোর লেনদেন শুরু হবে।

 

সাধারণ ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বিজনেস পার্টিসিপেন্ট আইডি (বিপি আইডি) খুলে বন্ড ক্রয় বিক্রয় করা হয়ে থাকে। কিন্তু পুঁজিবাজারে যাদের বিও বা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তারা সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই বন্ড কিনতে পারবেন।

 

আবার বিও অ্যাকাউন্ট আছে এমন যাদের কাছে বন্ড রয়েছে, তারা সেই হিসাব বা অ্যাকাউন্ট থেকেই বন্ড বিক্রি করতে পারবেন। সেজন্য তাদের বন্ডটি বিপি আইডি থেকে বিও অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজে যোগাযোগ করলেই তারা এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেবে।

 

তবে পুঁজিবাজারে যারা তালিকাভুক্ত রয়েছেন, তাদের বন্ড কেনার জন্য আলাদা বিপি আইডি খুলতে হবে না। এক্সচেঞ্জ থেকে বন্ড কেনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে তার বিপি আইডি তৈরি হয়ে যাবে।

 

ট্রেজারি বন্ড অন্তত একটি লট ধরে কিনতে হবে, যার মূল্যমান হতে পারে অন্তত এক লাখ টাকা। এগুলো ক্রয়-বিক্রয়ের ম্যাচুরিটি হবে সাধারণ শেয়ারের মতোই।

 

বাংলাদেশে এর আগে ২০০৩-২০০৪ সাল থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২২২টি বন্ড নিবন্ধিত ছিল, কিন্তু সেগুলো খুব বেশি লেনদেন হতো না। সেসব বন্ডের অনেকগুলো এর মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

 

ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, ব্যাংকের বন্ডের ৫০ শতাংশ বাইরে বিক্রি করতে হবে বলে তারা সম্প্রতি নিয়ম করেছেন। ফলে সেসব বন্ডও পুঁজিবাজারে আসবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন।

 

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বন্ড লেনদেন হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বন্ড বাজার সেভাবে তৈরি হয়নি। তবে এটা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ। এর ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে। হয়তো ট্রেডিং কিছুটা কম হতে পারে, কিন্তু সাধারণ গ্রাহকদের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগের একটা ভালো সুযোগ তৈরি হবে।”

 

তিনি আশা করছেন, এই প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে ব্যাংকিং ও বেসরকারি নানা খাতের আরও বন্ড পুঁজিবাজারে আসার পথ তৈরি হবে। সূত্র: বিবিস বাংলা 

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট