চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্ধ হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স, একক নীতিমালা করছে ইউজিসি

অনলাইন ডেস্ক

৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ৯:১১ অপরাহ্ণ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সান্ধ্য কোর্স বন্ধের চিন্তাভাবনা থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এর পরিবর্তে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য ও উইকেন্ড কোর্সকে একক নীতিমালার অধীনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

 

এ নীতিমালা তৈরির জন্য সম্প্রতি একটি পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ঢাকা, খুলনা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক ও ইউজিসির দুই কর্মকর্তাকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করে ইউজিসি কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

এরই মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটিতে এখনো সান্ধ্য কোর্স বন্ধের সম্ভাব্যতা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। এছাড়া বর্তমান বাস্তবতায় তা বন্ধ করে দেয়াও সম্ভব না। এ অবস্থায় পুরোপুরি বন্ধের পরিবর্তে সান্ধ্য ও উইকেন্ড কোর্সগুলোকে একক নীতিমালার মধ্যে নিয়ে এলে এর মান বৃদ্ধির পাশাপাশি এসব কোর্সের শিক্ষার্থীদের ব্যয়কেও যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে।

 

সান্ধ্যকোর্স নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‌কমিটির একটি মিটিং হয়েছে। যখন সিদ্ধান্ত হবে তখন সর্বসম্মতিক্রমে হবে। সান্ধ্য কোর্স থাকবে নাকি বন্ধ হবে সে ব্যাপারে আলোচনা হয়নি এখনো। হয়তো কেউই বলবে না বন্ধ করা উচিত। যদি বন্ধ করা উচিত না হয় তাহলে এটিকে কীভাবে যৌক্তিকীকরণ করা যায়, সে পথে যেতে হবে। তবে আমার মনে হয় এটি বন্ধ করা যাবে না। এর গুরুত্বও আছে। আবার যদি এ রকম হয় যে এটি শুধু আয়ের উৎস এবং শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাহলে সেটা ইউজিসি তদারক করবে।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সান্ধ্য কোর্স নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, পেশাদারত্ব বা জ্ঞানচর্চার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিকভাবে লাভবান করার জন্যই এসব কোর্স পরিচালনা করছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু শিক্ষকের আর্থিক স্বার্থের বিষয়টিও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিজস্ব আর্থিক স্বার্থ রক্ষার জন্য সান্ধ্য কোর্সে অতিরিক্ত জোর দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পড়ানোয় অবহেলার অভিযোগও রয়েছে।

 

যদিও ইউজিসির নতুন নীতিমালা সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্যই সান্ধ্য কোর্স। এখান থেকে যে আয় হবে তা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপে ব্যবহারের জন্য প্রভিশন রেখেছি আমরা। ডিন অফিসের ব্যয়ের জন্য, গবেষণার কাজেও এ অর্থ ব্যবহার করা হয়। আমরা এখন ঢাবিতে ফান্ডেড পিএইচডি প্রোগ্রামের নীতিমালা তৈরি করছি। নীতিমালা তৈরি হলে সান্ধ্য কোর্সের অর্থ দিয়েই পিএইচডি গবেষণায় ব্যয় করা হবে। ইউজিসি নতুন যে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, আমার ধারণা এটি সান্ধ্য কোর্স বন্ধের জন্য নয়, বরং নিয়মিত প্রোগ্রামের মান অক্ষুণ্ন রেখে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে সেজন্যই নেয়া হয়েছে।’

 

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের বড় একটি অংশ সান্ধ্য কোর্সগুলোকে দেখছেন নিয়মিত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও তাদের দক্ষতা উন্নয়নের পথে বড় অন্তরায় হিসেবে। এজন্য আবার সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষকদেরই দায়ী করা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘‌একজন শিক্ষক যখন সান্ধ্য কোর্স ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় দেন তখন তার আর নিয়মিত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য সময় থাকে না। এর একটি সার্বিক প্রভাব রয়েছে, যা খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না। যেখানে টাকা আছে, সেখানে কারো কোনো বাধা নেই। শিক্ষার নামে এটি একটি বাণিজ্য। কারণ সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকরা যে আচরণ করেন, সেটা নিয়মিত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য নেই। আমার কাছে বিষয়টি নীতিমালার ঊর্ধ্বে। কারণ নীতিমালা তখনই হবে যখন এটির বৈধতা থাকে। আমি মনে করি, সান্ধ্য বা উইকেন্ড কোর্স থাকাই উচিত নয়। নীতিমালা তৈরি হলে নতুন করে বৈধতা দেয়া হবে। এর প্রভাব আরো ভয়াবহ হবে।’

 

২০১৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সান্ধ্য কোর্স বন্ধের আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়টির সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সান্ধ্য কোর্সে শুধু টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, যদি ভর্তি করাতেই হয় তাহলে দুই শিফটে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মতোই সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করুক। একটি যথাযথ ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যোগ্যতা নিয়ে আসুক। টাকাই যেন যোগ্যতা না হয়। কিন্তু রাবি প্রশাসন কোনো কথা শোনেনি। এখানে টাকাই ভর্তি হওয়ার প্রধান যোগ্যতা। টাকা থাকলেই যেকোনো জায়গায় ভর্তি হওয়া যায়। যে নীতিমালাই করুক, এটি নেতিবাচক প্রভাবই ফেলবে।’

 

নতুন নীতিমালা প্রণয়নের আগে কমিটির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সান্ধ্য কোর্স না থাকলে চাকরিজীবীদের চাকরি বাদ দিয়ে কোর্স করার সুযোগ নেই। ইউজিসি যদি সান্ধ্য কোর্স নিয়ে ভালো কিছু করে, সেটা আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করব। তবে যেকোনো বিষয় আমাদের সাথে আলাপ করে করাই ভালো।’ তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা

 

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট