চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১৯৭০ সালে নির্বাচনোত্তর নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষা

পূর্ব প্রকাশিতের পর

নাওজিশ মাহমুদ

৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:০১ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও দুটি মত দেখা যায়। একটি স্বাধীনতার পক্ষে এবং আরেকটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতায় যাওয়া। আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারী বোর্ড যা সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী হিসেবে গণ্য হতো, সেখানে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে সবচেয়ে সোচ্চার। তাঁকে সমর্থন যোগান দলের মূল অংশের (পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের) সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ। ছাত্রলীগের মধ্যে এই দ্বিধাভিক্ত পূর্ব থেকে বিরাজ করেছিল স্বাধীনতার প্রশ্নে। এক পক্ষে ছাত্রলীগের সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন। অপর পক্ষে ছিলেন ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ ও ডাকসুর সহ সভাপতি আ শ ম রব। আ শ ম রব ও শাহজাহান সিরাজ নেতৃত্বাধীন অংশ নিউক্লিয়াস কর্তৃক প্রভাবান্বিত ছিল। স¦াধীনতার পক্ষে এবং কৃষকরাজ শ্রমিকরাজ কায়েমের লক্ষে শ্লোগান দিতো। অপরদিকে ছাত্রলীগের অন্য গ্রুপ শ্লোগান দিতো গণরাজ কায়েমের লক্ষে। বাংলাদেশ স্বাধীন করার চেয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের অগ্রাধিকার ছিল। খন্দকার মোশতাকসহ আওয়ামী লীগের বিরাট অংশ পাকিস্তানের ক্ষমতায় যেতে আগ্রহী ছিল। নিউক্লিয়াসের সাথে সম্পৃক্ত যুবক ও ছাত্ররা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ছিল আপোষহীন।

এর নেতৃত্ব ছিলো সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ। নিউক্লিয়াসপন্থীরা মিটিং ও মিছিলের মাধ্যমে স্বাধীনতার দাবীকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। জনগণও ধীরে ধীরে স্বাধীনতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠে। প্রশ্ন ছিল স্বাধীনতা আপোষে আসবে না লড়াই করে নিতে হবে। এই নিয়েও দলের ভিতর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল্। নিউক্লিয়াসের অনুসারী দলের যুব ও ছাত্রদের মধ্যে আবার সমাজতন্ত্রের ঝোঁক পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তখন পিকিংপন্থী বা মাওপন্থী একটি অংশ যারা সশস্ত্র লড়াইয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করার কথা বলতো। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে জনগণের মধ্যে তাঁদের কোন সমর্থন ছিল না। তবে যুবকদের মধ্যে একটি অংশ এই ব্যাপারে অনমনীয় ছিল। তাঁর বিপরীতে মস্কোপন্থী কমিউনিষ্ট পার্টি নামে আরেকটি অংশও সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য কাজ করতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুব ও ছাত্রদের মধ্যে সংগঠিত করার চেষ্টাা করতো। তাঁদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ছিল ছাত্র লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি।

তখন বিশ^ব্যাপী সমাজতন্ত্রে পক্ষে নিপড়ীত শ্রমিক শ্রেণি এবং কৃষক শ্রেণির অবস্থান সদৃঢ় হলেও বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সমাজতন্ত্র নিয়ে দ্বিধা ও দোদুল্যমানতা ছিল। তখন ছাত্রলীগের নিউকলিয়াসের সমর্থকরা সমাজতন্ত্রের শ্লোগান দিয়ে এই মধ্যবিত্ত যুব অংশকে স্বাধীনতার পক্ষে নিয়ে আসে। স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্র এই দুটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুবক ও ছাত্রদের উদ্দীপণা দেখা দেয়। এই উদ্দীপণার জনগণের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়।

তবে ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সৈয়দ নজরুলের ভাষণে নিউক্লয়াসপন্থীদের সরাসরি আক্রমণ করে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বকে সামনে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু বাড়াবাড়ি না করার জন্য নিউক্লিয়াসপন্থী যুবকদের আহবান জানান যাতে পাকিস্তানীরা কোন সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে। তার উপর আস্থা রাখার জন্য ছাত্রদের প্রতি আহ্বাণ জানান। এইভাবে তিনি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাড়তে দেননি। বক্তৃতা করার কথা থাকলেও এই দ্বন্দ্বকে প্রকাশ্যে আনলে ভুল বুঝাবুঝি বেড়ে যেতে পাওে, এই আশংকায় এম এ আজিজ ভাষন থেকে বিরত থাকেন।
চট্টগ্রামের এম এ আজিজ বাংলাদেশ স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য রাখার অপরাধে গ্রেফতার হন। এই নিয়ে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানায়। পাকিস্তান সরকার জনগণের প্রতিক্রিয়ায় বাধ্য হয়ে এম এ আজিজকে মুক্তি দেয়। মুক্তির পর বিশ^বিদ্যালয়ে সুর্যসেন হলে এম এ আজিজকে সম্বর্ধনা দেয়। এই সংবর্ধনায় এম এ আজিজ স্বাধীনতার প্রশ্নটি আবারও সামনে নিয়ে আসেন। ছয় দফা না মানলে এক দফার আন্দোলন যেতে বাঙালি বাধ্য হবে। এরপর এম এ আজিজ মারা যান। এ মৃত্যু স্বাভবিক না অস্বাভাবিক তা কোনদিন তদন্ত হয়নি। তেমনি তদন্ত হয়নি বৈরতের হোটেলে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে ১৯৭১ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির পূর্বে অধিবেশন ডাকার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে আহ্বান জানান। তা উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকেন ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও পরে ভুট্টোর প্ররোচনায় পিছিয়ে দেয়, এই অজুহাতে জাতীয় পরিষদে অধিবেশন এবং সংবিধান রচনার পূর্বে নেতৃবৃন্দের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে। ভুট্টো চাচ্ছিল ক্ষমতার অংশিদার, কিন্তু এটা নির্ভর করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার ইচ্ছার উপর উপর। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোন অবস্থাতেই ভুট্টোকে ক্ষমতার অংশিদার করতে রাজি হননি। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ভবন ছিল ঢাকায়। ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের সদস্যদের ঢাকা না আসার জন্য হুমকি দিয়ে রাখেন। তবু অনেক সদস্য ঢাকায় চলে এসেছিলেন। কিন্তু ভুট্টোর চাপে ১ মার্চ ১৯৭১ সালে দুপুর বেলা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে জনতা স্বতঃস্ফুর্তভাবে রাস্তায় নেমে মিছিল-শ্লোগান সহকারে ব্যারিকেড দিয়ে সারা দেশে অচল করে দেয়। ধরতে গেলে এই দিনেই বাঙালি স্বাধীনতা প্রশ্নে তাঁদের মনের ইচ্ছা জানিয়ে দেয়। জনগণের এই উচ্ছ্বাস ও মনোভাব আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে ৬ দফার প্রশ্নে আপোষ করার রাস্তা বন্ধ করে দয়ে। ৬ দফা মানার অর্থই হলো নবাবী আমলের মতো প্রায় স্বাধীনতা। পাকিস্তনের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা থাকতো রেফারীর মতো। তাই ১ মার্চ ১৯৭১ বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার বদলে স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রকারান্তরে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেয়। এর পরের স্বাধীনতা ঘোষণা শুধু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। স্বতঃস্ফূর্ত জনগণ প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ৩২ নং ধানমন্ডি গিয়ে গিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য চাপ দিতে থাকেন। দুরদর্শী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জনগণকে শান্ত হয়ে তার প্রতি আস্থা রাখার অনুরোধ করেন। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে আলোচনা করে ৭ মার্চ এক জনসভার আহ্বান করেন।

এই ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কি ঘোষণা দেন তা নিয়ে জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। পাকিস্তানের শাসকরা উৎকন্ঠায় থাকে। বিশ^ অপেক্ষায় থাকে কীভাবে পরিস্থিতি সামলে দেয়া হবে তা দেখতে। দলের কেউ কেউ স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুকে চাপ দেন। বামপন্থীরাও প্রত্যাশা করেছিল বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭ মার্চে ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায় জনগণের প্রতি ভবিষ্যত দিক নির্দেশনা সহ সামরিকি শাসন প্রত্যাহার , অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের সহ শর্ত আরোপ করেন। জনগণের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানান। স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের উৎকন্ঠা বাড়িয়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত পাকিস্তান সামরিক শাসকের আচরণের উপর ছেড়ে দেন। এই ভাষণ ছিল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৌশলী ভাষণ দেন। তিনি অসহেযাগে আন্দোলনের ডাক দেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন সামরিক শাসকদের বদলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় পরিচালিত হতে থাকে। প্রেসিডেন্ট এহিয়া খান বাধ্য হয়ে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনায় বসেন। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের উপর আক্রমণের প্রস্ততি নিতে থাকেন। কয়েকদিন ধরে আলোচনা চলা অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রস্তুতি শেষ করে নেয়। আলোচানা চুড়ান্ত পর্যায়ে প্রায় সমঝোতায় উপনীত হওয়ার অভিনয় করে হঠাৎ আলোচনার ইতি টেনে নিরস্ত্র বাঙালি উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার পূর্বে কাশ্মিরের একটি গ্রুপের ভারতীয় উড়োজাহাজ ছিনতাই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জটিলতার সৃষ্টি হয়। কাশ্মিরের ছিনতাইকারীরা ভারতের উড়ো জাহাজ লাহোরে বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার পাকিস্তানের উপর দিয়ে বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাকিস্তান তখন শ্রীলংকার বিমানবন্দর কলম্বো হয়ে বিমানে করে পাকিস্তানের সৈন্যদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করতে থাকে। সাগর পথে জাহাজে করে অস্ত্র নিয়ে এসে চট্টগ্রামের বন্দর থেকে খালাসের উদ্যোগ নেয়। অস্ত্র খালাস করতে গিয়ে জনতার সাথে সংঘর্ষ হয়। এই অস্ত্র খালাসকে কেন্দ্র করে জনতার সাথে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের প্রাথমিক সূত্রপাত ঘটে।

অস্ত্র খালাস এবং সামরিক বাহিনীর জনবল বৃদ্ধি করে প্রস্তুতি শেষ হলে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কাপুরুষোচিতভাবে বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পৃথিবীর অন্যতম গণহত্যার শিকার হয় বাঙালিরা। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যেদিকে পারে আত্মরক্ষার জন্য আত্মগোপন করে। যুব ও ছাত্র নেতারাও ঢাকা থেকে বেরিয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানী সেনাবহিনীর পক্ষে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক অসহযোগ আন্দোলনের প্রাক্কালে প্রায় ভেঙ্গে পড়ে। বাকী সকলকে পালিয়ে যেতে বলেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাকী সকলে নিরাপদে সরে পড়াতে সক্ষম হওয়ায় এটাই প্রমাণ হলোা পাকিস্তানীদের চরম ব্যর্থতা। যুদ্ধ শুরুর পুর্বেই পরাজিত হওয়া। বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মতো হরতালে ডাক দেন। বাঙালিকে স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ করে ও সহকর্মীদের সকল প্রস্তুতির জন্য নির্দেশনা দিয়ে আত্মবলী দেয়ার অর্থ হলো পাকিস্তানী শাসকদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেয়া। বঙ্গবন্ধু জানতেন জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, যিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার, তাঁকে পাকিস্তানীরা বিনাবিচারে কোনদিন হত্যা করতে সাহস করবে না। তাঁর সহকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করে দেন। সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিরোধ যুদ্ধ যুব-ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে সর্বাত্মক রূপ নিয়ে জনযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। (সমাপ্ত)

নাওজিশ মাহমুদ রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট