চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

এইডস প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ফাহিম মোরশেদ হিমু

৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ১ ডিসেম্বর পালিত হলো বিশ্ব এইডস দিবস। এইডস একটি মাত্র রোগ নয়। এর পূর্ণনাম হলো অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েনসি সিন্ড্রোম, যার অর্থ ‘অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতির লক্ষণসমূহ’। এইডস এমন একটি রোগ যা মানুষের দেহে রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা হ্রাস করে। এর ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়, যা শেষ পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যাক্তিকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। ১৯৮১ সালে ভাইরাসটি আবিষ্কারের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এইডস রোগ কারনে ২কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যায়। আর ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ৩ কোটি ৬৭ লক্ষ লোক এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত ছিল এবং ২০১৬ সালে এইডসের কারণে ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে এইচআইভি বা এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এসব রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছেন মাত্র ৫ হাজার ৫৮৬ জন। এখনো শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছেন ৭ হাজার ৪১৪ জন। শুধুমাত্র গত এক বছরে (নভেম্বর ২০১৮ থেকে অক্টোবর ২০১৯) মোট ৮৭৮ জন নতুন এইচআইভি রোগী শনাক্ত করা হয়। যাদের মধ্যে ৯১ জন রোহিঙ্গা এবং ৩০ শতাংশই বিদেশ ফেরত। বিদেশ ফেরতদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। কিন্তু ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এখন ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল কক্সবাজারে ৩৭৮ জন এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫৮ জন রোহিঙ্গা, ১২০ জন বাংলাদেশি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৬৫ জন পুরুষ, ১৬৪ জন নারী, ৪৮ জন শিশু এবং একজন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি। বিশ্বব্যাপী এইডস নির্মূলের অঙ্গীকারের সঙ্গে বাংলাদেশ একাত্মতা প্রকাশ করেছে। টেকসই উনয়ন লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশও ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। এসডিজিতে (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) তিন নম্বর লক্ষ্যমাত্রা হলো সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা। সব বয়সী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করা। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হলে এসডিজিতে আলাদাভাবে এইচআইভির উল্লেখ না থাকলেও এটি নিয়ে কাজ করতে হবে। বৈশ্বিকভাবে এইচআইভি সংক্রমণ কমছে। তবে বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যার মূল কারন হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অবস্থান, ভৌগোলিক অবস্থান, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন, অসচেতনতা। আর বর্তমানে এর সাথে যুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থান। বাংলাদেশে এইডস প্রতিরোধে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। সচেতনতা অভাবে বাংলাদেশে দিন দিন এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আবার এইডস নিয়েও রয়েছে নানা কুসংস্কার। যেমন সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে আক্রান্ত ব্যক্তি এটা গোপন রাখে। ফলে এ সমস্যা আরও জটিল হয়। এ বিষয়ে সমাজ অনেক বেশি স্পর্শকাতর। এ জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

এইডস নিয়ে সাধারণ মানুষ সহ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব। তারা মনে করতে পারে না অন্যান্য রোগের মতো এইডসও একটি রোগ,চিকিৎসায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্যবহৃত সিরিঞ্জের মাধ্যমে এইডস ছড়ায়। ফলে মাদকাসক্তরা এইডসের ঝুঁকির মধ্যেই থেকে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এইডস সম্পর্কে একটা ভীতি কাজ করে। অন্য রোগের ক্ষেত্রে এ রকম হয় না। এই ভয়ভীতি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আর যে বৈষম্যমূলক আচরণ সংক্রমিত ব্যক্তিকে সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়, তা থেকে বের হয়ে আসা দরকার। নতুবা তখন সে ভয় পেয়ে বিষয়টি গোপন করবে। কারণ এইডস শুধু অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায় না, অন্যের রক্তের মাধ্যমে, অন্যের সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমেও হতে পারে। মা থেকে শিশুর যেন এইচআইভি না হয় সেটা লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় আর্থিক, সামাজিক ও আইনি সেবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সর্বোপরি তাঁরা যেন কোনো প্রকার অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার না হন, এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে, তবে তা নির্দিষ্ট কোনো জনগোষ্ঠী মধ্যে নয়। দেশের গণমানুষের কাছে বড় আকারে কাজ করে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে বেশি মাত্রায় কাজ করতে হবে। ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এইচআইভি পরীক্ষার হার বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে সচেতনতা। যৌনকর্মীসহ ঝুঁকিপূর্ণ সব জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে সচেতনতার আওতায় আনতে হবে। এইডস নিয়ে প্রচার প্রচারণা বাড়াতে হবে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। শুধু মাত্র এইডস দিবসের পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে এখুনি এই সমস্যা সমাধানে সরকার সহ সকলের এগিয়ে আসতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট