চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতা

ফয়সাল মাহমুদ আল-মারজান

৩০ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

আজকের শিশুরাই একদিন জাতীর কর্ণধার হবেন। দেশ এবং জাতিকে সামনের দিকে, উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দেবেন। আর একটি শিশুকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন সুশিক্ষা ও বেড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ। যার বহুলাংশই নির্ভর করে শিশুর পিতা-মাতার সুশিক্ষা ও সচেতনতার উপর। পিতা-মাতা হচ্ছে একটি শিশুর প্রথম এবং প্রধান প্রতিষ্ঠান। যেখান থেকে শুরু হয় শিশুর বেড়ে ওঠা। প্রতিটি শিশুই জ্ঞানার্জন করে মায়ের কোল থেকেই। পরবর্তীতে ধাপেধাপে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সিঁড়ি পেরিয়ে আসে কর্মজীবনে। একজন দায়িত্ববান সদস্য হিসেবে তার উপর অর্পিত হয় জাতির সার্বিক উন্নয়নের কোন না কোন মহান দায়িত্ব।
সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার সচেতন থাকাটা জরুরী। পিতা-মাতা যদি সুশিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক হন তাহলে সন্তানের উপরেও সেই শিক্ষার প্রভাব পরে। কারণ সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রতিটি পদক্ষেপেই যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয় পিতা-মাতাকেই। আর সন্তানকে চক্ষু শীতলকারী ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পিতার চেয়ে মাতার সচেতনতা বেশি দরকার। কারণ সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব সাধারণত মায়ের উপরেই ন্যস্ত থাকে। তাইতো নেপোলিয়ন বোনাপোর্ট যথার্থই বলেছিলেন – আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি দেবো। শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশ যেন হয় শিশুর মেধা ও মননশীলতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। শিশুর খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হয় শিশুর মাকেই। তাই মায়ের সচেতনতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আরবী ভাষার একটি প্রবাদ- যখন একজন পুরুষ কে শিক্ষা দেয়া হয়, তখন শুধু একজন ব্যক্তিকেই শিক্ষা দেয়া হয়। আর যখন একজন নারীকে শিক্ষা দেয়া হয়, তখন একটি পরিবারকে শিক্ষা দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সুসন্তান গড়তে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিহার্য সত্ত্বেও বাংলাদেশের সার্বিক জনগণের মধ্যে মাত্র ২৬% নারী শিক্ষিত। এক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষরা এগিয়ে। কিন্তু একাডেমীক শিক্ষায় শিক্ষিত এই নারী পুরুষদের অধিকাংশই জানেনা কিভাবে একটি শিশুকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। ফলশ্রুতিতে নিজের অজান্তেই অনেক বিপদজনক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যা শিশুর স্বাস্থ্য ও মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) এক জরিপে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে শারীরিক ভাবে নিষ্ক্রিয় তিনজনে দুইজন শিশু। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০১ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে এসে ভালো করেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের জরিপে দেখা গেছে, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় শিশুর সংখ্যা ৭১ শতাংশ থেকে ৬১ শতাংশে কমে এসেছে। কিন্তু এটা মোটেই সন্তোষজনক অবস্থা নয়। এই সমস্যার জন্য তারা পিতা-মাতার অসচেতনতাকেই দায়ী করেছেন।
আজকের চিকিৎসাবিজ্ঞান শিশুর হাতে মোবাইল কিংবা ইলেকট্রিক ডিভাইস দিতে নিষেধ করছে। কিন্তু অজ্ঞতাবশত অনেক পিতা-মাতাই শিশুর হাতে খেলনার মত মোবাইল তুলে দিচ্ছেন। ফলে শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জাংফুড শিশুর মুখে তুলে দেয়া অসচেতন পিতা-মাতার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ফলশ্রুতিতে নিজের অগোচরেই সন্তানের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন অনেক পিতা-মাতাই।
পিতা-মাতার অসচেতনতার দরুন অনেক সন্তান ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে । কেউ কেউ মাদকাসক্ত হচ্ছে কিংবা দেশদ্রোহী ও মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যা কোন ভাবেই পিতা-মাতা এই দায় এড়াতে পারেন না। কাজেই আগামীর ভবিষ্যৎ আজকের শিশুদের দেশপ্রেমী ও সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পিতা-মাতার শিক্ষা ও সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। আর পিতা-মাতার সচেতনতার জন্য সুশিক্ষার পাশাপাশি দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সেজন্য গ্রাম কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারিভাবে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। যেখানে পিতা-মাতা সন্তানকে সঠিক পদ্ধতিতে লালন-পালনের জন্য প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পের্ক অবগত হতে পারবেন। এক্ষেত্রে মিডিয়াগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান গুলোর ছোট্টছোট্ট পদক্ষেপ অনেক সুফল বয়ে আনতে পারে। আমরা চাই না আমাদের মাঝে আর কোন নিবরাশ তৈরি হোক। আমাদের সন্তানরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণকামী হোক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট