চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

এ ধরনের হঠকারিতার অবসান হোক হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে জনদুর্ভোগ

২৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক ফিটনেসবিহীন একটি গাড়ির চালক ও মালিকসহ তিনজনকে কারাদ- দেয়ার জের ধরে সোমবার নগরীতে হঠাৎ ধর্মঘটের নামে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা শুধু অনাকাক্সিক্ষতই নয়, চরম ধৃষ্টতার শামিল। দৈনিক পূর্বকোণসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, পূর্বঘোষণা ছাড়াই পরিবহন ধর্মঘটের কারণে নগরীতে দিনভর চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। পরিবহন সেক্টরে সুশাসন ও জবাবদিহীতা থাকলে এবং জনগণের প্রতি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কোন প্রকার দায়বদ্ধতা থাকলে হঠাৎ ধর্মঘট ডেকে জনগণকে জিম্মি করতে পারতো না পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি এবং জনগণকে দুর্ভোগে ফেলার এমন চিত্র মোটেই জনকাম্য নয়। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী।

উল্লেখ্য, কথায় কথায় ধর্মঘট ডাকা এবং অন্যদের ওপর তা চাপিয়ে দেয়া এখন পরিবহন সেক্টরে অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। সরকার যখনই পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান, যখনই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আইনের আওতায় আনতে চান অথবা পরিবহন সেক্টরে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চান, তখনই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘট ডেকে দেশকে অচল করে দেয়ার পায়তারা করে। এ ধরনের কর্মকা- চরম দৃষ্টতার শামিল। কারণ দেশে সব পক্ষের যৌক্তিক স্বার্থ রক্ষায় আইন আছে। কেউ আইনের উর্ধে নয়। সুপথে থাকলে অন্যের স্বার্থহানি না হলে আইন সবার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কেউ আইন অমান্য করলে, অন্যায়ভাবে অপস্বার্থ রক্ষায় তৎপর হলে আইন অনুযায়ী তাকে বিচারের কাঠগড়ায় সোপর্দ করা রাষ্ট্রের কাজ। রাষ্ট্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এ কাজটি করে থাকে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সরকার পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। এতে নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বৈধ পরিবহন মালিক ও যাত্রীদের ন্যায্য স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে। সংগতকারণে কিছুটা কষ্ট হলেও সরকারের এই পদক্ষেপ জনসমর্থন পেয়েছে। কিন্তু কিছু পরিবহন মালিক-শ্রমিক গায়ের জোরে সরকারের এই জনবান্ধব উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে তারা আড়ালে থেকে পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ সোমবার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। অবশ্য এতে জনগণ দুর্ভোগে পড়লেও তাদের কিছু যায়-আসে না। তাদের কাছে এসবের কোনো গুরুত্ব নেই। স্বার্থই তাদের কাছে মুখ্য।
দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সোমবার শহরের প্রতিটি ব্যস্ততম মোড়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেছেন হাজার হাজার যাত্রী। যাত্রীদের এ দুর্ভোগের সুযোগে ঘি ঢেলে দিয়েছে সিএনজি ট্যাক্সি, রিকশা, টেম্পো ও রাইড শেয়ারাররা। যাত্রীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিয়েছে বাড়তি ভাড়া। বেকায়দায় পড়তে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থীদেরও। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেনি। এভাবে কম-বেশি সবাই কষ্ট ভোগ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মানসিক ও আর্থিকভাবে। একটি সভ্য ও আইনের শাসনভিত্তিক গণতান্ত্রিক দেশে এমন চিত্র কল্পনাতীত। এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশ ও জনস্বার্থ পরিপন্থী বিধায় নাটের গুরুদের চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়ায় সোপর্দ করা উচিত। এ ব্যাপারে সরকার কঠোর না হলে আগামিতেও এমন হঠকারী কর্মসূচি দিয়ে দেশে অচলাবস্থা সৃষ্টি ও জনগণকে চরম দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিতে দ্বিধা করবে না। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মঞ্জুরুল হক’র মতে, নিয়ম অনুযায়ী অভিযান চলছে এবং আইন অনুযায়ী বাস মালিককে কারাদ- দেয়া হয়েছে। বাস মালিকরা চাইলে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিনের আবেদন করতে পারেন। আমরাও মনে করি বিআরটিএর অভিযানে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা মনপুত না হলে আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু তারা তা না করে হঠাৎ ধর্মঘট ডেকে, একইসঙ্গে অন্যদেরও তা মানতে বাধ্য করে চরম বেআইনি কাজ করেছে। সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে প্রশাসনকে জিম্মি করাই যে তাদের লক্ষ তা স্পষ্ট। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থানই দেখতে চাই। আমরা আশা করতে চাই সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার কারো অন্যায় দাবির প্রতি মাথা নত করবে না। দেশ ও জনস্বার্থকেই সর্বোচ্চে স্থান দেবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট