চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করুন নীরব ঘাতক শব্দদূষণ

২০ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ

জনঅসচেতনতা ও প্রশাসনিক নির্লিপ্ততার সুযোগে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এখন শব্দদূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এখন নগরবাসীর জীবনের সামনে শব্দদূষণ নীরব ঘাতক হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি-বিধান থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগ না থাকায় বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে শব্দদূষণের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। আইন প্রয়োগের দুর্বলতা এবং জনসচেতনতার অভাবে শব্দদূষণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে চরম হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। শব্দদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে নাগরিক জীবন চরম বিপদে পড়বে।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ এর আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। নীরব এলাকা হচ্ছে হাসপাতাল, অফিস-আদালত ইত্যাদি এবং এর চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃৃত এলাকা। নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো এবং মোটর, নৌ বা অন্য কোনো যানে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এ বিষয়ক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, আইন ও বিধি-বিধানের প্রয়োগ হচ্ছে না নগরীর কোথাও। প্রশাসন পালন করছে নীরবতা, আর জনগণের একটি বড় অংশই অসচেতন। যারা সচেতন তারা দুর্বল বলে প্রতিরোধ গড়তে পারছেন না। ফলে চট্টগ্রামে শব্দদূষণের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অথচ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি-বিধানের সঠিক প্রয়োগ হলে এবং সংঘবদ্ধ জনপ্রতিরোধ থাকলে এমনটি হতো না।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিল্প এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা ৭৫ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবল, আর মিশ্র এলাকায় ৬০ ডেসিবল। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের চালানো জরিপে দেখা যাচ্ছে, নগরীর এসব এলাকায় শব্দদূষণের পরিমাণ সহনীয় মাত্রার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। চিকিৎসাবিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা ঘটতে পারে। উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ হয় বাধাগ্রস্ত। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়। মাংসপেশির সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘœ ঘটায়। এ ছাড়াও শ্রবণশক্তি কমে আসে। বধির হওয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি হয়। কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। তখন স্বাভাবিক শব্দ কানে শুনতে পাওয়া যায় না। মাথাব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনোসংযোগ কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ, এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মত মনোদৈহিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। হঠাৎ বিকট শব্দ যেমন, যানবাহনের তীব্র হর্ন বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রচ- চাপ দেয়। এ ধরনের শব্দের প্রভাবে সাময়িকভাবে রক্তপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। রক্তনালী সংকুচিত হয়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।

আমরা মনে করি, শব্দদূষণ যেহেতু নাগরিকজীবনকে বিপন্ন করে, সেহেতু এ বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই। এখনই এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। শব্দদূষণের কুফল বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির সুচিন্তিত কর্মসূচি থাকলে, পাঠ্যপুস্তকে বিশেষ প্রবন্ধ যোগ করা হলে, শব্দসন্ত্রাস প্রতিরোধে নাগরিক উদ্যোগকে উৎসাহ দেয়া হলে এবং শব্দদূষণ প্রতিরোধে যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারি ও পদক্ষেপ থাকলে জনকাক্সিক্ষত সুফল মিলবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিত হবে আইনের কঠোর প্রয়োগ, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও কঠোর নজরদারীর মাধ্যমে শব্দদূষণ-চিত্রের অবসান করা। এ বিষয়ে আমরা সরকারের জনস্বাস্থ্যবান্ধব পদক্ষেপই দেখতে চাই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট