চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকুক

লায়ন এ কে জাহেদ চৌধুরী

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১৫ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নজিরবিহীন ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্বিনীতদের বিরুদ্ধে বহুল প্রত্যাশিত ও আকাক্সিক্ষত অভিযান শুরু করেছেন। এই অভিযান সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। রাজনীতিতে সুবিধাভোগী একটি শ্রেণী সব সময় সক্রিয় ছিল, যারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। একমাত্র সুবিধাভোগী শ্রেণীভূক্ত লোকগুলো ছাড়া দলমত নির্বিশেষে সকল মহল থেকে চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধিঅভিযানকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। একজন ক্ষুদ্র সমাজচিন্তক হিসাবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমিও কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হলে দেশকে সর্বাগ্রে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন দিয়ে কখনও রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে না। এই বাস্তবতা অনুধাবন করেই হয়ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কঠিন কাজটিতে হাত দিয়েছেন। ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক রোকেয়া হায়দারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, “১/১১ এর পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য তিনি দুর্নীতিবিরোধী এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগকে ধরেছি, যুবলীগকে ধরেছি, একে একে সব ধরব।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে যে বার্তা তিনি দিতে চেয়েছেন সেটা হল দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বা ছত্রছায়ায় যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছেন তাদের কাউকে রেহাই দিবেন না। এই অভিযান সফলভাবে পরিচালিত হলে বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ ও দলবাজদের দৌরাত্ম কমবে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। উল্লেখ্য যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং তŧার একটাই লক্ষ্য ছিল, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙালি জাতির অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করা। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তিনি যখন অনুধাবন করলেন দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মী ও আমলাদের কারণে দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,“আইয়ুব ইয়াহিয়ার রক্ত চক্ষুকে আমি ভয় করি নাই, প্রয়োজনে আমি জীবন দেব। তবুও কোন দুর্নীতিবাজকে আমি ছাড় দেব না।” তিনি আরও বলেছিলেন, “বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে টাকা আনি আমার দেশের গরীব মানুষের জন্য। কিন্তু সেই টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে লুটেরাদের দল।” এখানে উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর সেই স্বপ্নের কবর রচনা করা হয়। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই মহৎ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ যেন কোন ভাবেই ব্যর্থ হয়ে না যায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। বিশেষ করে নিজ দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা বসন্তের কোকিলদের ব্যাপারে সদা সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরী।

বঙ্গবন্ধুকন্যার বিচক্ষণ নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক চক্রান্তকারী মহলের ঈর্ষাপরায়নতা থাকতেই পারে।

বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন নাই। সচেতন মহলের মতে একই ভুল যেন জননেত্রী শেখ হাসিনা না করেন। কেননা শেখ হাসিনাকে এদেশের বড়ই দরকার। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে অনেকদূর পিছিয়ে গেছে। জাতি স্বপ্ন পূরণের দ্বার প্রান্তে এসে শেখ হাসিনাকে হারাতে চায় না। সেজন্য সাবধানতা অবল¤¦ন জরূরী। কেননা মীর জাফর, খোন্দকার মোস্তাকদের উত্তরসূরীরা এখনও আমাদের মাঝেই বিরাজমান, ওদের চেনা বড় কঠিন।

জননিরাপত্তা, সামাজিক শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় সংকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও পরিচালনা করা অতীব প্রয়োজন। দলবাজি শুধু শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলে আরও মারাত্মক পর্যায়ে পৌছে গেছে, যা অনুপ্রবেশকারী বা কাউয়াদের আচরণে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়। সাধারণ মানুষের মতে এই পদক্ষেপের সুফল পেতে হলে গ্রামীণ পর্যায়ের দলবাজ, টেন্ডারবাজদের পাকড়াও করতে হবে। কেননা শতকরা ৮০ ভাগ লোক গ্রামে বসবাস করে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড সত্ত্বেও দলবাজ টেন্ডারবাজদের কুকীর্তির কারণে সকল সাফল্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা রাতদিন পরিশ্রম করে তার সুফল ঘরে তুলতে পারছেন না শুধুমাত্র এই সকল দলের নাম ব্যবহারকারী লুটেরাদের জন্য। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই শুদ্ধিকরণ অভিযান গ্রামীণ পর্যায়ে প্রসারিত করা জরুরি।

দেশ, দল ও জনগণের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর গৃহিত পদক্ষেপ এর মাধ্যমে শুদ্ধ রাজনীতি চর্চার দ্বার উন্মোচিত হবে নিশ্চয়ই। দীর্ঘদিনের প্রচলিত আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দলে পদায়ন বন্ধ করতে পারলে ত্যাগী ও নিষ্ঠাবান নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে সক্রিয় হবে এবং পেশী শক্তির রাজনীতির কবর রচিত হবে। ফলে দেশ ও দল উভয়ই লাভবান হবে। সুতরাং বিরোধীতার জন্য বিরোধীতার রাজনীতি পরিহার করে দলমত নির্বিশেষে সকলকে চলমান শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানানো উচিত। সামাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্যানসারের রূপ ধারণ করা দুর্নীতি, দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার অশুভ প্রতিযোগিতা ও অশুভ শক্তির আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ সময়োপযোগী ও দেশপ্রেমের উজ্জল দৃষ্টান্ত। সাবাস বঙ্গজননী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। এ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতেই হবে, দেশপ্রেমিক কোটি বাঙালি আপনার সাথে আছে।

লায়ন এ কে জাহেদ চৌধুরী কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট