চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আত্মহত্যা সমাধান নয়, বাঁচতে হবে নিজের জন্য

জুবায়ের আহমেদ

৬ মার্চ, ২০২০ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

আত্মহত্যা মহাপাপ, প্রত্যেকটি ধর্মমতেই আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং আত্মহত্যাকারীর প্রতি মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য কঠোর হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে। তথাপিও যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ জাগতিক বিভিন্ন সমস্যায় হতাশ হয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে, পরিবার-পরিজনের কথা না ভেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, আত্মহত্যার মাধ্যমে কোন কিছুর সমাধান হয়েছে বলে শুনিনি কখনো। চলার পথে বহু সমস্যাকে সঠিক ভাবে মোকাবেলা করতে না পারে মৃত্যুর পথ বেছে নিলেও ইহকালিন-পরকালিন সমস্যা আরো বড় হয়, আপাত দৃষ্টিতে আত্মহত্যাকারী সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করলেও একজন ব্যক্তি আত্মহত্যার মাধ্যমে হারায় পৃথিবীর আনন্দ-বেদনার মুহুর্তগুলো, পরিবারকে চাপে ফেলে দিয়ে যায়, যে সমস্যার কারনে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, সে সমস্যাগুলোরও কোন সমাধান হয় না, ফলে এ ধরনের সমস্যা থেকে ভবিষ্যতে অন্য কোন মানুষের উত্তোরণের কোন পথ তৈরী হয় না, আরো বহু মানুষ তাদের ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যায়, হতাশায় মৃত্যুর পথ বেছে নেয়।

দাম্পত্য কলহের জের ধরে আত্মহত্যা, পরকিয়ার কারনে অশান্তি সৃষ্টি হলে আত্মহত্যা, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে আত্মহত্যা, অভাবের তাড়না থেকে আত্মহত্যা করে, কাগজপত্র ভুল আসায় পরীক্ষা দিতে না পারলে আত্মহত্যা, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা, পরিবারের শাসনে হতাশ হয়ে আত্মহত্যা সহ বিভিন্ন কারনে সুন্দর জীবনের মায়া ত্যাগ করে সমস্যা সমাধানের জন্য ধৈর্য্য ধরতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেকে, যা কাম্য নয়।
আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার তালিকায় নির্দিষ্ট কোন বয়স কিংবা উচু-নিচু শ্রেণীর তফাৎ দেখা যায়নি। সাধারণ পরিবার থেকে শুরু করে অধিক সম্পদের অধিকারী যেকোন ব্যক্তিই জীবনের প্রতি হতাশায় এবং সমস্যা সমাধানের পথ বের করতে না পেরে হতাশাগ্রস্থ হয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়, মানুষের অসুস্থতায় চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ হতে সহায়তা করা তথা ডাক্তারী পেশার মতো মহৎ পেশায় জড়িত থাকা বহুজনও হতাশাগ্রস্থ হয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে। দুর্বল মনামনিসকতার ব্যক্তিই সমস্যায় পতিত হয়ে হতাশ হয়ে পড়ে, মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লে সমস্যা সমাধানের চেষ্টার বিপরীতে পরিবারের কথা না ভেবে, ধর্মীয় কঠোর বিধানের কথা না ভেবে, সর্বোপরি নিজের সুন্দর জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঘৃণিত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

আত্মহত্যার বিষয়ে ধর্মীয় কঠোর নিষেধ ও পরকালীন শাস্তির বিধান থাকলেও মানুষ জাগতিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জেনেশুনে কেনো পরকালীন শাস্তির মুখোমুখি হতে চায়, তা বোধগম্য নয়। দুনিয়ার যেকোন সমস্যা ও কঠিন পরিস্থিতি থেকেই পরকালীন শাস্তি অনেক ভয়াবহ।
আত্মহত্যাকারী বহু ব্যক্তিই মৃত্যুর পূর্বে অনেক ধর্মীয় কথাবার্তাও বলে যায়, কিন্তু নিজেই যে ভুল কাজ করছে সে বিষয়ে জ্ঞানশুণ্য হয়ে পড়ে, সমস্যাকে মোকাবেলা করতে ভয় পেয়ে মৃত্যুকে বেছে নেয়, আত্মহত্যায় মৃত্যু মানেই সমাধান নয়, মুক্তি নয় বরং আত্মহত্যা সমস্যাগুলোকে আরো জিইয়ে রেখে যায়, যা কখনো সমাধান হয়, সমস্যা থেকে উত্তোরনের নজির তৈরী হয় না।

মান সম্মান চলে যাবে, পরিবারের বদনাম হবে, অপমানিত হবো কিংবা যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না, এই ধরনের মনমানসিকতা ত্যাগ করে সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে একটি আত্মহত্যা আরো বহু সমস্যার জন্ম দিয়ে যায়, পরিবারের ভরসাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে যায়, পরিবার ও নিজের স্বপ্নকে খুন করা হয় অবলীলায়। যখনই মনে হবে যে, আমার আত্মহত্যা করা উচিত, তখনও সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, সমস্যাগুলো কাছের মানুষ ও আত্মীয় স্বজনের সাথে বলতে হবে, এভাবেও সমাধান না হলে কিংবা সমস্যা যদি আইনগত জটিলতার হয়, আইনের আশ্রয় নিতে হবে, সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, হোক সেটা পক্ষে বা বিপক্ষে। পৃথিবীতে মানুষ একবারই আসে, মানব জীবনে সমস্যা থাকবেই, সেসব অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে, ব্যর্থতা মানেই জীবন শেষ নয়। জীবনে সফলতা মানেই কোন সমস্যা ছাড়া বেঁচে থাকা নয়। ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান করে, নিজের কথা ভেবে, পরিবারের কথা ভেবে আত্মহত্যার চিন্তা পরিহার করে বেঁচে থাকার নামই সফলতা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট