চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পূর্বকোণে সংবাদ প্রকাশের জের

পাহাড় খেকো ভুট্টু চেয়ারম্যানকে আবারো ৬ লাখ টাকা জরিমানা

নিজস্ব সংবাদদাতা হ কক্সবাজার

২০ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের রামুর শীর্ষ এই পাহাড় খেকো মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টুকে গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) পাহাড় ধ্বংস করার অপরাধে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন। তিনি বলেন, ‘পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ ধ্বংস করার অপরাধে রামুর

মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টুকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর এর আগেও তাকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। কিন্তু পাহাড় কাটা বন্ধ করেননি। সরেজমিন অভিযান করে পাহাড় কাটার যথেষ্ট প্রমাণও পাওয়া যায়। ভুট্টু চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পাহাড় কাটার বিষয়ে সম্প্রতি দৈনিক পূর্বকোণে সচিত্র সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদের পর সেখানে পরিদর্শনে যায় পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনুছ ভুট্টু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ মিঠাছড়িতে বেপরোয়াভাবে পাহাড় কাটা শুরু হয়। তার নেতৃত্বাধীন বাহিনী পুরো ইউনিয়ন জুড়ে ভয়ংকর রূপে পাহাড় কেটে আসছে। ইতিমধ্যে ইউনিয়নের পানেরছড়া, বনতলা, নিজেরপাড়া, বলীপাড়া, বসুন্ধরা, চেইন্দাসহ অন্তত ১০টি এলাকার ২০টি’র বেশি পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে চেয়ারম্যান ভুট্টু বাহিনী। বর্তমানেও ওইসব এলাকায় সমানতালে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টু’র নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ব্যাপকহারে পাহাড় কাটা হয়েছে। এই পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন অনেকবার অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে পাহাড় কাটার দায়ে চেয়ারম্যান ভুট্টু ও তার বাহিনীর লোকজনকে মামলা এবং জরিমানা করা হয়েছে। একাধিকবার জব্দ করা হয় পাহাড় কাটার সরঞ্জাম। তারপরও ক্ষমতারধর পাহাড় খেকো চেয়ারম্যান ভুট্টুকে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই ইউনুছ ভুট্টুর বাহিনী ছিল। এই বাহিনীতে রয়েছে চেয়ারম্যান ভুট্টুর ভাই সরওয়ার আলম ও নূরুল আজিম, চাচাতো ভাই মুফিজুর রহমান, দক্ষিণ মিঠাছড়ির পানেরছড়া বলিপাড়ার মো. আলমের পুত্র মো. শহীদুল্লাহ, পানেরছড়া পূর্বকূল পাড়ার আবদুল গফুরের পুত্র ফরিদ আলম, সিকদার পাড়ার মৃত আবু বক্করে পুত্র পূর্বপানের ছড়ার নূর আহামদের পুত্র জসিম উদ্দীন, মো. হোছেনের পুত্র জসিম উদ্দীন, পশ্চিম পানের ছড়ার নবী হোছেনের পুত্র নাছির উদ্দীন, আবদুস সালামের পুত্র মো. মিজান এবং বলীপাড়ার মৃত আবদুল মজিদের পুত্র মো. আলমসহ অন্তত ৫০জন ।

চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে চেয়ারম্যান ভুট্টু বাহিনী। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই ইউনুছ ভুট্টু তার বাহিনী নিয়ে শুরু করে পাহাড় কাটার মিশন। এই বাহিনী স্কেভেটর ও ডাম্পারসহ আধুনিক যন্ত্র দিয়ে একে একে কেটে সাবাড় করে আসছে পুরো ইউনিয়নের পাহাড়গুলো।
অভিযোগ রয়েছে, বড় নেতাদের নাম ব্যবহার করে ‘অদৃশ্য’ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ইউনুছ ভুট্টু তার বাহিনী দিয়ে একচেটিয়াভাবে পাহাড়গুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এভাবে তিনি একে একে কেটে ফেলছে দুই-তিন’শ ফুট উঁচু উঁচু পাহাড়। এসব পাহাড়ের অধিকাংশেই ছিলো সামাজিক বনায়ন। পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হয়েছে অগণিত সামাজিক বনায়নের সৃজিত গাছও। কিন্তু ইউনুছ ভুট্টুর ‘অদৃশ্য’ ক্ষমতার কাছে সামাজিক বনায়নের অংশীদাররা ছিল বরাবরই অসহায়।

পরিবেশবাদি সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে ইউনুছ ভুট্টু বাহিনী অন্তত ১০টি পয়েন্টে ১৫টি পাহাড় কেটে নিয়েছে। পাহাড় কাটার ভয়াবহ চিত্র দেখতে গিয়ে সরকারি কর্মচারী, সাংবাদিক, স্থানীয় লোকজনসহ অনেকেই তার বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ শিকার সার্ভেয়ার শহিদুল।
ইতিপূর্বে ইউনুছ ভুট্টুর বিরুদ্ধে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। তারপরও কোন অদৃশ্য কারণে চেয়ারম্যান ভুট্টুকে দমানো যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট