চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

মিথ্যা পদবী ব্যবহার করায় সেলিমকে অপসারণ : অলি

অবশেষে ভেঙে গেল এলডিপি

করিম আব্বাসীর নেতৃত্বে নয়া কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:০২ পূর্বাহ্ণ

আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে গেল কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নেত্রকোনা থেকে নির্বাচিত চারবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ আবদুল করিম আব্বাসীকে সভাপতি করে সাত সদস্যের নতুন এলডিপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য সচিব হয়েছেন এলডিপির সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। গতকাল সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাত সদস্যের নতুন এলডিপি গঠনের ঘোষণা দেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। এ সময় দলের অনেক নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সেলিম বলেন, কর্নেল অলি আহমদের প্রতি অনাস্থা দিয়ে আমরা আলাদা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করছি। শিগগিরই বর্ধিত সভা করে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

এদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল অলি বলেছেন, এলডিপি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত এক নম্বর রাজনৈতিক দল। গত ১২ বছর ধরে আমি এই দলের সভাপতি। সুতরাং এই রাজনৈতিক দলকে অন্য কারও নেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই; এমনকি কোনো অধিকারও নেই। এলডিপির নিবন্ধন আমার নামে। ফলে আমার দলই মূল দল। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয় মুক্তিমঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

আবদুল করিম আব্বাসীর নেতৃত্বাধীন নতুন এলডিপির আহবায়ক কমিটির সদস্যরা হলেন মেহেরপুর থেকে নির্বাচিত তিনবারের সংসদ সদস্য ও এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল গনি, এলডিপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ বাশার, সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদ আনোয়ার, এলডিপির দফতর সম্পাদক কাজি মতিউর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে শাহাদত হোসেন সেলিম বলেন, আগামীতে বর্ধিত সভা করে এলডিপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। নতুন এলডিপি ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে থাকবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, এলডিপি হিসাবে ২০ দলীয় জোট আমাদের স্বীকৃতি দিবে বলে আমরা আশা করছি।
শাহাদত হোসেন সেলিম বলেন, সম্প্রতি সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে দলের নির্বাহী কমিটি থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি এলডিপি‘র প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। একইসঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে দল পরিচালনা করছেন। সেলিম আরও বলেন, এলডিপি প্রতিষ্ঠাকালীন দলটিতে ৩২ জন সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু অলি আহমদ এর অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে তারা সবাই একে একে এলডিপি ছেড়ে চলে গেছেন। বর্তমানে দলের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ ছাড়া দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন কোনো সিনিয়র নেতা দলে নেই। তিনি অভিযোগ করেন, অলির নেতৃত্বাধীন মুক্তিমঞ্চ নামে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আলাদা প্লাটফরম বলা হলেও বর্তমানে এটি জিয়া পরিবার ও বিএনপির বিষোদগার প্লাটফরমে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে আমরা কর্নেল অলি আহমদের প্রতি অনাস্থা দিয়ে আলাদা এলডিপি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মিথ্যা পদবী ব্যবহার করায় সেলিমকে সরানো হয় : অলি
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ (অব.) বীর বিক্রম বলেছেন, এলডিপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম সব সময় নিজেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচির বলে পরিচয় দিতেন। অথচ ‘আমার’ দলের গঠনতন্ত্র অনুযাযী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিচের কোনো পদ নেই। পদ আছে যুগ্ম মহাসচিব। তাকে নিষেধ করার পরও সব সময় এই পদটি ব্যবহার করত। তাই তাকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, ‘তাদের ২০ দলীয় জোটে নেওয়া হবে কিনা এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। সেটা ২০ দল সিদ্ধান্ত নেবে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, ‘তারা দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি না যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিংবা দল থেকে বহিষ্কার করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এলডিপির সভাপতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক রাজনীনৈতিক দল রযেছে। আরেকটি দল হলো। তারা প্রেসক্লাবে, ফুটপাতে বসে নানান কর্মসূচি পালন করবে। এতে অনেকের সুবিধা হবে। অসুবিধা কি?’

সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ বলেন, ‘গত ১১ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তাদের ক্ষমতায় থাকাকালে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। দেশে মানবাধিকার বিঘিœত হচ্ছে, গণতন্ত্র নেই। ব্যাংকে টাকা নেই, সর্বত্র লুটপাট চলছে। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, ব্যবসা বাণিজ্য মন্দা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে পৃথিবীতে এই ধরনের কোন ঘটনা অতীতে ঘটেনি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এই সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।’ অলি আহমদ বলেন, ‘এই সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো সরকার নয়। সরকার যদি জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হতো, তাহলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামে এত ঊর্ধ্বগতি হতো না। তাই আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, অবিলম্বে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচন দিতে। কারণ এভাবে দেশ চলতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘যতদিন সরকার পদত্যাগে বাধ্য না হয়, ততদিন আন্দোলন চলবে। আমাদের শক্তিশালী হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে হবে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট