চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সীতাকু-ে ছদ্মবেশী ডাকাতদের হাতে খুন ডা. শাহআলম

পূরণ হলোনা গ্রামের শিশুদের সেবা দেওয়ার স্বপ্ন

সৌমিত্র চক্রবর্তী হ সীতাকু-

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

গ্রামের শিশুদের সুচিকিৎসা সেবা দিতে চেয়েছিলেন সীতাকু-ের কুমিরার বাসিন্দা প্রবাসী শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহআলম। এই লক্ষে সৌদি আরবের নামকরা একটি হাসপাতালের ৩০ বছরের চাকুরি ছেড়ে দেশে এসে গতবছর নিজ বাড়ির সামনেই গড়ে তুলেছিলেন ‘বেবি কেয়ার’ নামক ক্লিনিক। ইতিমধ্যে তার ক্লিনিক শিশু চিকিৎসায় যথেষ্ট সুনামও কুড়িয়েছে। কিন্তু ডা. শাহআলমের স্বপ্ন পূরণ হলো না। বৃহস্পতিবার রাতে গাড়ি চালক-হেল্পারের ছদ্মবেশে থাকা গাড়ি চালকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। গতকাল (শুক্রবার) দুপুরের দিকে পুলিশ তার লাশটি উদ্ধার করে। প্রথমদিকে তাকে অজ্ঞাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও পরে লাশটি শনাক্ত করেছে তার পরিবারবর্গ। পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল (শুক্রবার) সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিরা বাইপাস সড়কে ঢাকামুখী লেনের পাশে গাছপালার ভেতরে এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পায় সেখানে খেলতে থাকা শিশুরা। পরে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে সীতাকু- থানার পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে চমেক হাস পাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। এদিকে বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে তার লাশ উদ্ধার হলেও প্রথম দিকে পুলিশ লাশটির পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। ফলে এটি অন্য কোন এলাকার মানুষ হিসেবে ধরা নেয়া হয়।

কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিহতের লাশ দেখে রাত ৯টার পর তার স্বজনরা থানার সাথে যোগাযোগ করে লাশটি ডা. শাহআলমের বলে চিহ্নিত করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থল ও নিহতের নিজ এলাকা কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী খুবই হতাশ হয়ে বলেন, ‘ডা. শাহআলম অত্যন্ত বড় মাপের একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। তিনি আমার এলাকার ছোটকুমিরা গ্রামের মৃত মাস্টার আজিজুল হকের ছেলে। কিন্তু দীর্ঘ ৩০ বছর সৌদি আরবের একটি নামকরা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চেয়ারম্যান বলেন, একবার আমার ছেলের একটি জটিল রোগ হয়েছিলো। এখানে চিকিৎসকরা রোগটি শনাক্ত করতে পারছিলেন না। একেকজন একেক রোগ বলে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। শেষে এলাকার মানুষের পরামর্শে আমি সৌদি আরব গিয়ে তার শরণাপন্ন হই। তিনি ছেলেকে দেখার সাথে সাথে বলে দিলেন তার কি রোগ হয়েছে। সেই সাথে দিলেন অষুধ। এতেই আমার ছেলে সুস্থ। চেয়ারম্যান মোর্শেদ আরো বলেন, অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে ডা. শাহআলমের স্বপ্ন ছিলো দেশে এসে সাধারণ মানুষের শিশুদের চিকিৎসা দেবেন। এ লক্ষে চট্টগ্রামের লাভলেইনে তার বাসা হলেও তিনি নিজ গ্রাম ছোটকুমিরা বাজারে এসে গতবছর আগে গড়ে তোলেন ‘বেবি কেয়ার’ নামক ক্লিনিক। সেখানে মাত্র ৩’শ টাকা ভিজিটে শিশুদের চিকিৎসা দিতেন। তার আরেকটি ভালো দিক ছিলো যে তিনি নামি ও ভালো অষুধ কোম্পানি ছাড়া অন্য কোন যেনতেন অষুধ কিনতেন না বা লিখতেন না। অখ্যাত কোম্পানির কোন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভকে তিনি ক্লিনিকেও ঢুকতে দিতেন না। এভাবে সেবা দিয়ে তিনি প্রায়ই রাতে লোকাল গাড়িতে করে চট্টগ্রামে ফিরে যেতেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় তিনি ক্লিনিক থেকে চট্টগ্রামের লাভ লেইনে যাবার জন্য সীতাকু–অলংকার রুটের নাভানা পরিবহন নামক লোকাল গাড়িতে উঠেন। এরপরই যাত্রীশূন্য হবার সুযোগে নাভানার ভেতরেই গাড়ি-চালক হেল্পাররা সব কিছু ছিনিয়ে নিয়ে তাকে হত্যা করেছে বলে আমরা ধারণা করছি। এ রুটে এর আগেও অনেকবার রাত ৯টা-১০টার পর ফাঁকা লোকাল গাড়িতে যাত্রীদের সর্বস্ব ছিনতাই থেকে খুনের ঘটনা ঘটেছে’। এটি তেমনই চালক-হেল্পারের ছদ্মবেশে থাকা রোড ডাকাতদের কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সীতাকু- থানার ওসির দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) শামীম শেখ বলেন কুমিরায় বাইপাস সড়কটি সমতল থেকে অনেকটা উঁচু।

খুনিরা লাশটি মহাসড়কের পাশ থেকে নিচের দিকে ফেলে দিলে সেটি ঝোপের মধ্যে একটি গাছের সাথে আটকে যায়। সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় শিশুরা খেলতে গিয়ে লাশটি দেখতে পায়। তিনি বলেন, লোকটির বয়স আনুমানিক ৫০-৫৫। নিহতের শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। আঘাত ও রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। তিনি আরো বলেন, প্রথমে আমরা তার পরিচয় না জানলেও রাতে জেনেছি তার নাম ডা. শাহআলম। ক্লিনিক থেকে ফেরার পথে গাড়ি চালক-হেল্পাররা এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট