চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১৪১ কোটি টাকা আত্মসাৎ

মিশম্যাকের মিজান, ব্যাংকের নন্দ দুলালের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার থেকে ১৪১ কোটি ১৩ লাখ ২ হাজার টাকা ঋণ নেয় চট্টগ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠান মিশম্যাক শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ। ব্যাংক ঋণের নিয়ম অনুযায়ী পর্যাপ্ত জামানত দেওয়ার শর্ত থাকলেও এত টাকা ঋণ নিতে দিতে হয়নি কোন কাগজ-পত্রও। শুধুমাত্র ব্যাংকটির তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপকের সাথে গভীর সম্পর্ক থাকায় বিনা জামানতেই ঋণ পায় প্রতিষ্ঠানটি। তবে শেষ পর্যন্ত এসব টাকা পরিশোধ না করেই শিল্প প্রতিষ্ঠানটির মালিক সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করে তা বিদেশে পাচার করেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দুদক জানিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ ১৪১ কোটি ১৩ লাখ ২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগে মিশম্যাক শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মিজানুর রহমান শাহীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সাথে পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া বেআইনিভাবে ঋণপ্রদানে সহায়তার অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপক নন্দ দুলাল ভট্টাচার্যকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক

প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে নগরীর আগ্রাবাদ শাখার মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে জাহাজ আমদানীর জন্য ঋণপত্রের মাধ্যমে ঋণ নেয় মিশম্যাক শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মিজানুর রহমান। কিন্তু এরপর থেকে ঋণের কোন টাকাই পরিশোধ করেননি। বরং সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করে তা বিদেশে পাচার করেছেন। এ কাজে সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক নন্দ দুলাল ভট্টাচার্য্য। মূলত দু’জনের যোগসাজশে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলেও জানায় দুদক।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে তিন সদস্যের দুদকের একটি টিম। দুদকের দল মিশম্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের বিরুদ্ধে ১৪১ কোটি ১৩ লাখ ২ হাজার টাকা ঋণের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করেন। একই সাথে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মামলা দায়েরের অনুমতিও চাওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ৭ অক্টোবর কমিশন মামলা দায়েরের অনুমতি দিলে গতকাল বৃহস্পতিবার মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ওই টিমের অন্য দুই সদস্যরা হলেন- দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব আলম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য পূর্বকোণকে বলেন, ব্যাংক ঋনের টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে আসামীরা পলাতক রয়েছেন, তবে তাদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।

মামলার এজহাজারে বলা হয়, মিজানুর রহমান শাহীন ও নন্দ দুলাল ভট্টাচার্য পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ^াসভঙ্গের মাধ্যমে ঋণের অর্থ আত্মসাত ও পাচার করেছেন। ঋণ আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় নন্দ দুলাল ভট্টাচার্য গ্রাহককে প্রয়োজনীয় জামানত ছাড়া অনুমোদনের পূর্বে ঋণপত্র খুলে ও জামানতকৃত সম্পত্তির অতিরিক্ত মূল্যায়ন দেখিয়ে ঋণ প্রদান করেন। ওই ঋণ জ্ঞাতসারে অবহেলা ও পর্যবেক্ষণ ও ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্ত সঠিকভাবে পরিপালন না করে ব্যাংক তথা রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করেছেন নন্দ দুলাল। ঋণের ওই অর্থ স্থানান্তর ও লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থের অবস্থান, মালিকানা, নিয়ন্ত্রণ গোপন ও ছন্দাবৃত্ত করতে সহায়তা করেন অভিযুক্তরা। যা ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং ২০১২ সনের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারা লঙ্ঘন করেছেন।

আসামিদের মধ্যে মিজানুর রহমান শাহীন নগরীর চকবাজার এলাকার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে। আর নন্দ দুলাল ভট্টচার্য্য নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের মৃত আশুতোষ ভট্টাচার্য্যরে ছেলে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট