চারটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা বাছাই করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে এ নিয়ে চার দফা জরিপ শেষ করেছে দলটি। সারাদেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৩টি সংসদীয় আসনেও এ জরিপ কাজ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র। জরিপ চালানো বৃহত্তর চট্টগ্রামের সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের ১৬টি, কক্সবাজারের ৪টি এবং তিন পার্বত্য জেলার ৩টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের সন্তোষজনক সময় নির্ধারণের পর ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে-এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আগাচ্ছে দলটি। এ অবস্থায় দলটির জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ প্রার্থী বাছাই। কারণ ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর প্রতি আসনে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী অসংখ্য প্রার্থী ইতোমধ্যে গণসংযোগে নেমেছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে দলটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এর জন্য ইতোমধ্যে একাধিক জরিপ সম্পন্ন করেছে। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে চারটি যোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
যোগ্যতাগুলো হলো, প্রথমত-নিজের নির্বাচনী এলাকায় ভোটারের কাছে বেশি জনপ্রিয়তা, দ্বিতীয়ত-বিগত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে সংশ্লিষ্টতা ও ত্যাগ স্বীকার, তৃতীয়ত- নির্বাচিত হলে দেশের জন্য তিনি কতটা নিবেদিত হবেন এবং চতুর্থ- নিজের স্বার্থ নয়, দলের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে কিনা, -এ চারটি বিষয় সামনে রেখে প্রতিটি সংসদীয় আসনে জরিপ চালায় দলটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজস্ব লোকবল দিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এ জরিপ সম্পন্ন করেছেন।
সূত্র জানায়, বৃহত্তর চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ২৩টি সংসদীয় আসনে প্রায় ৮০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের রয়েছেন প্রায় অর্ধশত। ইতোমধ্যে তারা গণসংযোগ, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু আসনে অসংখ্য মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ে বেগ পেতে হবে বিএনপিকে।
সূত্র জানায়, মনোনয়নের ক্ষেত্রে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বর্তমান অবস্থানও পর্যালোচনা করা হবে। যাকে মনোনয়ন দিলে সাধারণ ভোটাররা খুশি হবে, এমন প্রার্থীর হাতেই নির্বাচনী টিকিট দেবে বিএনপি। তবে এক্ষেত্রে মৌলিক নীতি অনুসরণ করা হবে। এজন্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি হিসাবে চারটি যোগ্যতাকে অন্যতম মানদণ্ড হিসাবে সেট করা হয়েছে। প্রার্থী মনোনয়নে তরুণ প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পেতে পারে। আবার দলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নবীন-প্রবীণের চমৎকার সমন্বয় ঘটিয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চারটি বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে কেন্দ্র। ‘মূলত নিজের নির্বাচনী এলাকায় ভোটারের কাছে বেশি জনপ্রিয়তা, বিগত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে সংশ্লিষ্টতা ও ত্যাগ স্বীকার, নির্বাচিত হলে দেশের জন্য কাজ করতে কতটা নিবেদিত হবেন এবং নিজের স্বার্থ নয়, দলের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে কিনা, -এ চার বিষয় সামনে রেখে প্রতিটি সংসদীয় আসনে জরিপ চালায় বিএনপি।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি, যদিও আগের রাতে ভোট হওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরেও আসে দলটি।
পূর্বকোণ/ইবনুর