স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪ হাজার ১২৭ জন। পরবর্তী বছরে তথা গেল এক বছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন ৬ হাজার ৮৬৯ জন। ভর্তি রোগীর এ তথ্যই বলছে, এক বছরের ব্যবধানে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতো গেল আক্রান্ত রোগীর চিত্র।
মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার চিত্র চমকে ওঠার মতো। ২০২৩ সালে হাসপাতালটিতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৩৬ জন। আর ২০২৪ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৩ জনে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতনতার ঘাটতি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনের প্রবণতা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণে অসংক্রামক এ রোগের ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। যা উদ্বেগজনক। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের তাগিদ চিকিৎসকদের।
নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. সীমান্ত ওয়াদ্দাদার বলেন, আমাদের দেশে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ রোগী অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা থেকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। যদিও স্ট্রোকের সঠিক কারণ নির্ণয় করা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে বেশকিছু শারীরিক অবস্থা স্ট্রোকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং বংশগত কারণে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকরা জানান, দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে স্ট্রোক। এসব রোগীর জন্য প্রথম চার ঘণ্টাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয়- গোল্ডেন আওয়ার। এসময়ের মধ্যে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা গেলে দ্রুত সুস্থ হতে পারেন রোগী।
তবে হতাশার কথা হচ্ছে, স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসায় পুরো চট্টগ্রামেই নেই বিশেষায়িত হাসপাতাল। দিনদিন যে পরিমাণ রোগী বাড়ছে, সে পরিমাণ চিকিৎসা কেন্দ্রও গড়ে ওঠেনি। অথচ সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিবছর হাজারও মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তাই রোগীদের সেবার পরিধি বৃদ্ধির জন্য পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। জানা যায়, পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের রোগীদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতাল। অথচ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগ চলছে নানা সংকটের মধ্যে। বিভাগটিতে শয্যা আছে মাত্র ৩৩টি।
কিন্তু এর বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকে গড়ে দেড় থেকে দুই শতাধিক। যার কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ও কনসালট্যান্ট ডা. সামী এম আদনান বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি বর্তমান সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বজুড়ে স্ট্রোকের কারণে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া অনেকেই স্থায়ীভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হন। তবে যথাযথ সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
বিশ্ব স্ট্রোক দিবস আজ : আজ মঙ্গলবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। জনসাধারণের মধ্যে এ রোগের কারণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি পালনের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
পূর্বকোণ/ইব