চট্টগ্রাম রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

পরীক্ষক ছাড়া ল্যাব আর কতদিন?

সারোয়ার আহমদ

১৩ জুন, ২০২৩ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে গত ১৫ মাস ধরে নেই কোন পরীক্ষক। বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী মহল ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের পক্ষ থেকে পরীক্ষক সংকটের বিষয়টি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরে আনা হলেও ১৫ মাসে এর কোন সমাধান হয়নি। বরং দিন দিন সংকট আরো বাড়ছে।

 

এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন- পরীক্ষক ছাড়া এই ল্যাব আর কতদিন? এই পরীক্ষক সংকটের সমাধান কবে হবে? এর সঠিক উত্তর মিলছে না কারো কাছে। মাঝখান থেকে এমন অবহেলার বলি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

 

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিজস্ব ওই পরীক্ষাগারে ১৫টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। দুটি রাসায়নিক পরীক্ষক, তিনটি উপপ্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক এবং পাঁচটি সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ শূন্যই রয়ে গেছে।

 

এতো লোকবল সংকটের কারণে একদিকে পণ্য খালাস পেতে হয়রানির পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমদানিকারকরা।

 

পরীক্ষাগারটির একমাত্র পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষক মো. আবদুল হান্নান অবসরে যান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বর্তমানে সহকারী কেমিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মো. হেলাল হাসান ও ল্যাবের কয়েকজন অফিস সহকারী নিয়ে ল্যাব পরিচালনা করছেন। তবে অনেকেই দাবি করছেন দায়িত্বরত তিনি সব পরীক্ষা করতে পারেন না। ফলে ল্যাবের পরীক্ষক সংকটের কারণে দেখা দিয়েছে পণ্যের নমুনা জট। আগের তুলনায় কাস্টমসের ল্যাবে পরীক্ষণ কার্যক্রম চলছে মাত্র ৩০ শতাংশ। আর ৭০ শতাংশ হচ্ছে বহির্ল্যাবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। একইসাথে অর্থেরও অপচয় হচ্ছে।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিদিন এই ল্যাবে পরীক্ষার জন্য গড়ে ১০০ ফলের নমুনাসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ২০০ নমুনা আসে। নমুনা গ্রহণের দিন ফল পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া গেলেও অন্যান্য পণ্যের নমুনার ৬০ ভাগ প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয় না। প্রতিদিন এভাবে বাড়তি নমুনার চাপে পণ্যের প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব হয়। যার কারণে পণ্যের নমুনাজট তৈরি হয় এই ল্যাবে।

 

এদিকে সময়মতো প্রতিবেদন না পাওয়ায় আমদানিকৃত পচনশীল পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে আমদানিকারককে একদিকে বন্দরের ভাড়া এবং অন্যদিকে পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।

 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, ব্যবসায়ীরা অর্থ খরচ করে পণ্য আমদানি করে। সেই পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত এসে যাওয়ার পর খালাস পর্যায়ে গিয়ে রাসায়নিক পরীক্ষায় আটকে যায়। লোকবল সংকটের কারণে যদি স্যাম্পল টেস্ট করতে গিয়ে সময় বেশি লাগায় পণ্য পচে যায় তার দায়ভার কে নিবে? শুধু রাসায়নিক পরীক্ষাগারের পরীক্ষকের অভাবে কেন ব্যবসায়ীদের পোর্ট ডেমারেজ দিতে হবে? এভাবে আর কতদিন? বার বার বলার পরেও ১৫ মসে সমাধান না হওয়া খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।

 

একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘ঠিক সময়ে রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়ায় এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে আটকে থাকছে। ১৫ মাস ধরে কাস্টমসের পরীক্ষক সংকটের কারণে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর কাস্টমসের এই ব্যর্থতার মাসুল গুণতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।’

 

তিনি আরো বলেন, এই সমস্যার সমাধান কবে হবে কেউ জানে না। এতোবার এবিআর এবং কাস্টমসের কাছে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন সমাধান হয়নি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান বলেন, ‘রাসায়নিক পরীক্ষক ও জনবল সংকটের বিষয়টি এনবিআরকে এর আগেও জনানো হয়েছে, আবারো জানানো হবে। দ্রুত এর সমাধানের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।’

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট