চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফুটপাতে সেহেরি বিলান ওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ মার্চ, ২০২৩ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ

২০১৯ সাল। করোনা মহামারী ও লকডাউনে বিপর্যস্ত জনজীবন। গবির-অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। দেশের সেই সংকটময় মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ান মানবতাপ্রেমী অনেক ব্যক্তি, সংগঠন-সংগঠক। তাদের অনেকেই এখন নগরের অলি-গলি ও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিলাচ্ছেন সেহেরি। কথা হয় তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপু নামে এক তরুণের সঙ্গে। করোনা মহামারীকালীন এক টাকায় খাবার বিলি করেছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের করোনার সংকটময় দিনে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গল্প শোনালেন তিনি। বললেন, ২০১৯ সালে রাস্তার ধারে মিষ্টি কুমড়া রাখে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রথম শুরু করি ফ্রি সবজি বাজার। করোনা থেকে রক্ষায় সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয় মাস্ক পরানোর ওপর। মাস্ক পরানোর ওপর জোর দিতে এক টাকায় একটি মাস্ক কিনলে বিনা মূল্যে দেওয়া হয় নানা পদের সবজি ও ভোগ্যপণ্য। তারপর শুরু করা হয় ভ্রাম্যমাণ রেস্তোরাঁ। সিআরবি এলাকায় পথশিশুদের জন্য এ রেস্তোরাঁ চালু করা হয়।

 

করোনা মহামারীর তাণ্ডব কমে আসলে গত বছর থেকে শুরু করেন ‘সেহেরি’ বিতরণ। তপু বলেন, নিজস্ব দুইজন বাবুর্চি দিয়ে রান্নাবান্না করা হয়। একদিন পর পর সেহেরি বিলানো হয়। তার জন্য রয়েছে ১০-১৫ জনের একটি সাইকেল গ্রুপ। রাত ১২টার পর কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে ফুটপাত ও মাজার এলাকায় অসহায়-গবিরদের মধ্যে সেহেরি বিলান ওরা। তপুর নিজস্ব ও দুর্বার ক্লাবের সদস্যদের সহায়তা সেহেরির আয়োজন করা হয়। বাজেট অনুযায়ী খাবারের মেন্যু নির্ধারণ করা হয় বলে জানান তপু।

 

নগর তারা ফাউন্ডেশন : কয়েক বছর ধরে রমজান মাসজুড়ে অসহায়-গরিব, বিভিন্ন হাসপাতালের রোগী ও রোগীর স্বজনদের সেহেরি বিতরণ করে আসছে সংগঠনটি। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম। গেল রমজানে চট্টগ্রাম মেডিকেল ও আগ্রাবাদ মা-শিশু হাসপাতালের রোগী এবং রোগীর স্বজনদের মধ্যে বড় পরিসরে সেহেরি বিতরণ করেছিলেন। চলতি রোজার প্রথমদিনেই বহদ্দারহাট এলাকায় সেহেরি বিতরণের মাধ্যমে মাসব্যাপী সেহেরি বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে সেহেরি বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। নগর তারা ফাউ-েশনের প্রধান উপদেষ্টা ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেহেরি বিতরণ ছাড়াও অসহায়-অসচ্ছল ও পথশিশুদের কল্যাণে বছরজুড়ে নানা মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। করোনা মহামারীতে ব্যাপকভাবে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আলোচনায় আসে নগর তারা ফাউন্ডেশন।

 

ব্যবসায়ী নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগর তারা ফাউন্ডেশন মূলত পথশিশুদের কল্যাণে কাজ করে। এছাড়াও অসহায়-শ্রমিক, উপার্জনহীন-অক্ষম, পঙ্গু-ভিক্ষুকদের কল্যাণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। করোনা মহামারীতে ব্যাপকভাবে কাজ করে নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। তারপরও নগর তারা ফাউ-েশনের সদস্যরা রান্না করা খাবার ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছুটে গেছে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। তিনি বলেন, গত বছর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মা-শিশু হাসপাতালের রোগী, রোগীর স্বজনদের মধ্যে একাধিকবার সেহেরি বিতরণ করা হয়। মাসভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তা বিতরণ করা হয়।

 

ফাউন্ডেশনের সদস্যরা জানান, ১৫দিনের রান্নাবান্না সামগ্রী একসঙ্গে কেনা হয়েছে। দুইজন মহিলা বাবুর্চির তত্ত্বাবধানে রান্নাবান্না করা হয়। সেহেরিতে থাকে ডিম, মাছ, মাংস ও সবজি-ডাল। একেক দিন একেক ধরনের খাবার রান্না করা হয়। রাত ১২টার পর প্যাকেট করা সেহেরি নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

পূর্বকোণ/পিআর /এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট