চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বছরের ব্যবধানে ১০ পণ্যের দাম বেড়েছে ২৯.৫১%

মরিয়ম জাহান মুন্নী

৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল বছর। কিন্তু বছরজুড়ে নিত্যপণ্যের দামে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। এবছর প্রায় সব পণ্যের দামই ছিল চড়া। তবে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনিসহ প্রায় ১০ রকমের পণ্যের দাম বেড়েছে আকাশচুম্বী। দামের সাথে তাল মেলাতে অনেকে লাগাম টেনেছেন অন্যান্য খরচে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে জমা টাকাও খরচ করে মাস চালিয়েছেন কেউ কেউ।

 

আবার ভোজ্য তেল ও চিনির দাম বারবার সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তার প্রভাব পড়েনি বাজারে। সারাবছরই এসব পণ্যের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ডিমের দামও সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙেছে এবার। এক বছরের বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোটা-চিকন দু’জাতের চাল, দু’রকমের ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, তেল, ডিম ও লবণ এ ১০ রকমের পণ্যে এক বছরের ব্যবধানে ২৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে।

 

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে এক বছরের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। মূলত বছরজুড়ে বাজারে সরকার নির্ধারণ করা দামে কোনো পণ্যই মেলেনি। এর প্রেক্ষিতে গত এক বছরের বাজার দর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।

 

বাজারে বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে আটার দাম। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বাজারমূল্য ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। ধাপে ধাপে দাম বেড়ে এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরে আটা ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। একইভাবে ময়দা ৬৪ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা শতকরা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

চালের দাম বছরের ব্যবধানে কেজিতে ১০-১২ টাকা বেড়েছে। গত বছর ঠিক এ সময় মোটা জাতের চাল ৪৬-৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন সে চাল ১০-১২ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে চিকন চালের দাম (মিনিকেট) ৬০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের নাজিরশাইলের দাম ৮০ টাকায় ঠেকেছে। মোটা চালের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং চিকন চালে বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৫৫ টাকা পর্যন্ত।

 

তেল-চিনির দামে অস্বস্তির বছর ছিল ২০২২। বলতে গেলে এ বছর তেল-চিনির দাম সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আবার বিভিন্ন সময় দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ বন্ধ রেখে সংকট তৈরি করেছে কোম্পানিগুলো। নিয়ন্ত্রণে সরকার বারবার দাম বেঁধে দিলেও বেশির ভাগ সময় সেটা কার্যকর হয়নি। গতবছর এসময় তেলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ১৬৫ টাকা। কিন্তু এখন বাজারে তা ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে চিনি ছিল কেজিপ্রতি ৭৪-৮০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। বছরের ব্যবধানে তেলের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং চিনির দাম বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

 

একইভাবে বছরের শেষ কয়েক মাসে এসে বেড়েছে বিভিন্ন জাতের ডালের দাম। উন্নত জাতের মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১১৫-১২০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায় এবং মটর ডাল ৭০ থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। মসুর ডাল বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬.৬৭ শতাংশ এবং মটর ডালে বেড়েছে ২৪. ৫৮ শতাংশ।

 

এছাড়া ফার্মের ডিম ও লবণের দামও এবার রেকর্ড ভেঙেছে। বছরের প্রথম দিকে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায় কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডিমের দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে এখন ১০৮-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে লবণের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা ছিল। তবে এখন তা ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ এবং লবণে বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

 

এভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় এ ১০ পণ্য কিনতে বিদায়ী বছরে নাভিশ্বাস উঠছে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সংকট বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। যা আসন্ন বছরেও অব্যাহত থাকতে পারে।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট