চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

টেকনাফে সুপারির বাম্পার ফলন

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম

৭ অক্টোবর, ২০২২ | ১:২৯ অপরাহ্ণ

টেকনাফে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। কার্তিক-অগ্রহায়ণ তথা নভেম্বরের দিকে গাছে সুপারি পাকার নিয়ম চলে আসলেও প্রাকৃতিক বিবর্তনে এবারে আগাম পেকেছে। গ্রাম্য প্রবাদ চালু আছে ‘আশিন কাতি-গোলা বাতি’। তার মানে হচ্ছে আশ্বিন-কার্তিক মাসে গাছের ফল-ফলাদি পেকে থাকে। মৌসুমের শুরুতে বিনা খরচের এ ফসলে কৃষকরা বেশি লাভবান হওয়ায় সুপারি চাষের জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে।

তাছাড়া সকলের মুখে মুখে প্রবাদ চালু আছে ‘টেকনাইফ্যা সুপারি-গালত দিলে মিশ্রি’। অন্য চাষাবাদের মত কোনরকম ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়ায় কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন বলে জানা গেছে।

সুপারি চাষের উপযোগী আবহাওয়া এবং মাটি হওয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও টেকনাফে উৎপাদিত সুপারি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতা পেলে গ্রামীণ কৃষকরা সুপারি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলে আরো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে সচেতন মহলের ধারণা। উন্নত জাতের সুপারি একবার চাষ করে সারাজীবন আয়ের মুখ দেখতে পান কৃষকরা। এতে পরিবারে প্রচুর টাকা আয়ের মাধ্যমে জীবন-জীবিকায় অবদান রাখে।

 

সরেজমিনে হোটেল দ্বীপ প্লাজা ও টেকনাফ থানার সামনে দেখা যায়, সুপারির বাগান মালিকগণ আগাম পাকা উৎপাদিত সুপারি টমটম, রিকশা, জিপ, ভ্যানগাড়ি যোগে বিক্রি করার জন্য বাজারে নিয়ে আসছেন। আবার পথিমধ্যে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা সুপারি কিনে বাজারে আনছেন।

ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীগণ এসে সুপারি কিনে কাঁদি থেকে ছিঁড়ে বস্তায় ভরে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন। টেকনাফ উপজেলা থেকে সপ্তাহের দুই হাটে ১২-১৫ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এ উপজেলার সুপারি গুনে ও মানে উৎকৃষ্ট হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে এর বেশ কদর রয়েছে।

কয়েকজন সুপারি বাগান মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুপারি চাষ একবার ভালভাবে করতে পারলে সারা জীবন ফলন ঘরে তুলতে পারেন। বর্ষা শেষের দিকে আগাম পাকা সুপারি বাজারে বিক্রি করেন। একেকটি গাছে কমপক্ষে ৪-৫ পন (৮০টি সুপারিতে ১ পন) সুপারি ধরে। বর্তমানে আগাম পাকা এক পন সুপারি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ লোকজনও বাড়ির খোলা জায়গায় সুপারি চাষ করে সহজেই লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন।

 

টেকনাফের উন্নয়নবঞ্চিত কৃষি এলাকা সদর ইউনিয়ন ও সাবরাং ইউনিয়নের অধিকাংশ পরিবার সুপারি থেকে প্রচুর টাকা রোজগার করে থাকেন। এর মধ্যে হাজার হাজার পরিবার বর্তমানে এ চাষের উপর নির্ভরশীল। তারা অন্য চাষের চাইতে সুপারি চাষে কল্পনাতীত লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে টেকনাফের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে সুপারির চাষাবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২২ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক সচেতন সুপারি বাগানমালিক শুকনো মৌসুমে গাছে সার ও সেচ দিয়েছেন। এজন্য এবারে টেকনাফের সর্বত্রই সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট